করোনা অতিমারির কারণে কর্মী সংকটে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সংকট কাটাতে ইপিএসভিত্তিক (এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম) দেশগুলো থেকে প্রতিনিয়ত কোরিয়া ঢুকছে নতুন কর্মী। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপক সুনাম। অনেক মালিকও তাদের কর্মীদের  ফিরিয়ে আনতে মুখিয়ে আছে। অনেক মালিক আটকে পড়া কর্মীর জন্য অপেক্ষা করছেন। নতুন কর্মী দেশটিতে প্রবেশ করতে পারছে না। এ অবস্থায় কোটা পূরণেও ব্যর্থ বাংলাদেশ।

প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরিয়ান মালিকরা বাংলাদেশিদের নিয়োগ দিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনে দূতাবাস। কিন্তু সেটাও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

হতাশ ইপিএস কর্মীরা জানান, সমস্যা নিয়ে সবাই আলোচনা করেন কিন্তু সমাধান কিছু হয় না। অথচ এ একটি বাজার সক্রিয়ভাবে ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম বাজারে নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন বাংলাদেশ থেকে কর্মী যেতে পারছে না, দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার পেছনের কারণ কী? এ রকম হাজারো প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে প্রায় প্রতিটি ইপিএসভিত্তিক দেশ সঠিকভাবে পরীক্ষা করে কর্মীদের কোরিয়ায় পাঠায়। কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষা সঠিকভাবে করানোর তাগিদ দেয়। যেন করোনা আক্রান্ত কোনো শ্রমিক দেশটিতে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশ করা ৩৩ জন কর্মীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল থেকে আবারও বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য কোরিয়ার দরজা।

কপাল পুড়ল ইপিএস কর্মীদের 

বাংলাদেশের জন্য কোরিয়া সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার। কোরিয়ার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দ করে। নিরুপায় না হলে বাংলাদেশি শ্রমিকরাও কোম্পানি ছাড়েন না। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ছুটি নিয়ে দেশে এসে আটকা পড়েছেন দেড়  হাজারেরও বেশি কর্মী। তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনও দৃশ্যমান কোনো উদ্যােগ গ্রহণ করা হয়নি। অনেক কর্মী তাদের পুরনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

কথা বলছে না কেউ

এ বিষয়ে দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে গত ১২ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে যে জুম মিটিং হয় তাতে রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, কোরিয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় বাজার। যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। ২০২০ সালে ২৩ জুন কোরিয়া বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর ১৯ জন কর্মী করোনা পজিটিভ হয়েও কোরিয়ায় প্রবেশ করেন। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।

এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহিনও। তিনিও ইপিএস কর্মীদের সম্ভাব্য সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। 

এসকেডি