লি সিন লুংয়ের পর সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এতদিন সবাই জানতেন। আজ হোক বা কাল হেং সুই কিটকেই সিঙ্গাপুরের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমনটাই ধারণা করা হতো। হেং দেশটির ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ঘোষণা করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তিনি আর থাকতে চান না। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কে হবেন সিঙ্গাপুরের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

এক্ষেত্রে নাম আসছে শাসকদল পিপল’স অ্যাকশন পার্টির একাধিক নেতার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে লরেন্স ওং, ওং ইয়ে কুং ও চান চুন সিং নামের তিন জনের। তাদের বয়স ৬০ এর কম। হেং নিজেই পরবর্তী নেতার যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, তা তাদের সঙ্গে মিলে যায়।

এর আগে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি জানিয়েছিলেন, ৭০ এর পর তিনি আর প্রধানমন্ত্রীত্ব চান না। তার বর্তমান বয়স ৬৯ বছর। হেংও জানিয়েছেন, করোনার সংকট কাটিয়ে উঠতে উঠতে তিনি ৭০ এর কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন।

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন লরেন্স ওং। তিনি সিঙ্গাপুরের জ্বালানির বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রধান ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি সিন লুংয়ের প্রধান সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। আগামী ১৫ মে তার অর্থমন্ত্রী হওয়ার কথা। এদিনই মন্ত্রীসভা পুনর্গঠিত হবে।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে ওং এক বা একাধিক দফতরে সরাসরি দায়িত্ব পাবেন। এসব দফতরকে সিঙ্গাপুর সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি বার্ষিক বাজেট তৈরি করবেন। সিঙ্গাপুরের করোনা সংকট মোকাবিলায়ও বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ওং। এটিও তার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার করবে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি মন্ত্রণালয় মিলে গঠন করা টাস্ক ফোর্সের সহকারী প্রধান ছিলেন তিনি। তার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন তাকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলেছে। তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করেছেন।

ওং এই তিন রাজনীতিবিদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়স্ক। তারপরও পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে তারই। তাছাড়া তিনি কুংয়ের মতো কোনো নির্বাচনে হারেননি। দল হিসেবে পিএপিও চায় এমন কাউকে প্রতিনিধি করতে যার বিশাল সমর্থক-গোষ্ঠী রয়েছে, যার সমর্থন দলটির লাগাদার জয় ধরে রাখতে কাজে লাগবে।

আলোচনায় থাকা আরেকজন হচ্ছেন ওং ইয়ে কুং। কুং ২০১১ সালের নির্বাচনে হেরেছিলেন। এরপর তিনি একটি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান টেমাসেক এই কোম্পানির একটি অংশের মালিক ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি নির্বাচনে জয়ী হন এবং দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আগামী ১৫ মে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। মন্ত্রিসভায় তার অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম। কিন্তু তাকে এখন এমন একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি জনগণের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে এতদিন ওং যেই টাস্ক ফোর্স পরিচালনা করেছেন সেখানেও দায়িত্ব পাবেন কুং। 

তুলনামূলকভাবে ওং ও কুংয়ের থেকে চানের সম্ভাবনা কম। তিনি পিএপি’র দ্বিতীয় সহকারী মহাসচিব। ২০১১ সালের নির্বাচনে তার জয় রয়েছে এবং কোনো নির্বাচনেই তিনি হারেননি। ওই বছরই তিনি পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। আগামী ১৫ মে তাকে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে শিক্ষামন্ত্রী করা হবে। তবে তার রয়েছে বেশ কিছু বিতর্ক। গত বছর মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ যখন সুপারমার্কেটগুলোতে ভিড় করেছিল, তখন তার সমালোচনা করেছিলেন চান। এটি অনেকেই ভালোভাবে নেননি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তার নাম আসার পর এর বিরুদ্ধে অনলাইন পিটিশন শুরু হয়। এতে স্বাক্ষর করেন সাত হাজারের বেশি মানুষ। অপরদিকে তার পক্ষে অনলাইন পিটিশন শুরু হলে স্বাক্ষর পড়ে মাত্র এক হাজার।

এসএসএইচ