পর্তুগালে ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বনাঞ্চলে দাবানলের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে গত এক সপ্তাহ দাবানল পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় দমকল কর্মীদের পাশাপাশি দেশটিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যুক্ত রয়েছেন।

পর্তুগালের কুইমরা জেলার অলিভেইরা ডো হসপিটাল অঞ্চলের এলাকায় ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে রাতদিন ছুটি ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন অন্তত ২০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ। নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে মানবতার সেবায় তাদের এই আত্মনিবেদন স্থানীয় সমাজে প্রশংসিত হয়েছে।

এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশি জুয়েল জানান, দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে হাজারও প্রচেষ্টার পরও দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ঘরবাড়ি ও কৃষি খামার নিরাপদ রাখার জন্য আমরা বিশ্রাম বিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছি। গত দুই মাস যাবত এই পরিস্থিতি বজায় রয়েছে তবে আমরা স্থানীয়দের অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি, তারা আমাদের সাহস জোগাচ্ছেন।

পর্তুগালের কুইমরা জেলার অলিভেইরা ডো হসপিটাল অঞ্চলজুড়ে কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এ আগুন নিভিয়ে আনতে স্থানীয় অগ্নি নির্বাপণ বাহিনীর সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে কাজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের একদল তরুণ। তারা বনবিভাগের অগ্নিনির্বাপক বাহিনী হিসেবে নিয়োজিত। দিনরাত ক্লান্তি, বিশ্রামের অভাব কিংবা পারিবারিক দায়িত্ব কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারছে না।

এই দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো– জহিরুল ইসলাম জুয়েল, নাঈম ফেরদৌস মুভিন, সৈয়দ ইমাম সাঈদ রিফাত,মো. সুলতান সালাউদ্দিন ফাহাদ, ইমাম হোসেন রুমন, মো. সোহেল, রবিউল হোসেন রবিন, সানোয়ার হোসেন সানি, কবির হোসেন, রানা, ফারুক, আসাদুজ্জামান জুয়েল, মোহাম্মদ সায়েদ, মোহাম্মদ মানিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল।

টানা কাজ করতে গিয়ে দলের অনেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে মো. সুলতান সালাউদ্দিন ফাহাদ নামে এক প্রবাসী পায়ে গুরুতর আঘাত পাওয়ার পরও বাধ্য হয়ে আবারও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছেন। তার এই দৃঢ় মনোবল ও দায়িত্বশীলতা অন্যদের অনুপ্রাণিত করছে।

স্থানীয় পর্তুগিজ নাগরিকরা জানিয়েছেন, প্রবাসী শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা তাদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও এভাবে মানবসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করায় তাদের সম্মান জানিয়েছেন অনেকে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পর্তুগিজ নাগরিক রেজাউল বাসেত শিমুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পর্তুগাল তথা ইউরোপের মাটিতে এ ধরনের সামাজিক অবদান বাংলাদেশিদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে তুলছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর বনভূমিসহ বসতবাড়ি, যানবাহন ও কৃষি খামার দাবানলে পুড়ে গেছে। এই দাবানল পরিস্থিতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করে কাজে ফিরেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১১টি স্থানে দাবানল সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। ৩ হাজারের বেশি দমকল কর্মী, এক হাজারের বেশি অগ্নিনির্বাপক যানবাহন এবং একটি অগ্নিনির্বাপক কানানডিয়ার উড়োজাহাজের মাধ্যমে দাবানল নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এসএসএইচ