কানাডায় করোনার সংক্রমণ কমায় নতুন মাত্রা ও আয়োজনে বিভিন্ন প্রদেশে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল আজহা। দীর্ঘ বিরতির পর পবিত্র ঈদের দিনে প্রবাস জীবনে বাঙালিরা মিলিত হলে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।

প্রায় দুই বছর বিরতির পর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় প্রবাসীরা নতুন আমেজে ভিন্ন মাত্রায় পালন করছেন ঈদুল আজহা। কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানি করেন। কানাডায় সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেওয়া বাধ্যতামূলক। ঈদের দিন অনেকের কর্মদিবস থাকে। তারা খুব ভোরে নতুন পোশাক পরে ঈদের নামাজ আদায় করতে বেরিয়ে যান।

অন্যরা মসজিদে নামাজ আদায় শেষে পরিবার পরিজন নিয়ে বের হন। ঘুরতে যান বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের বাসায়। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবাই একত্রিত হয়ে মেতে ওঠেন নানা গল্প আড্ডায়। পাশাপাশি প্রবাস থেকে দেশের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেও চলে টেলিফোনে আলাপচারিতা। আলাপের স ময় কারো কারো নয়ন ভেসে আসে দেশে একসঙ্গে ঈদ না করতে পারার আক্ষেপে। উঠে আসে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আর স্বজন হারানোর শোকের স্মৃতিচারণ।

প্রবাসে ঈদ উদযাপন নিয়ে এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ড. মো. বাতেন বলেন, বাংলাদেশের মতো আনন্দ করে এখানে ঈদ হয় না। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কানাডার মতো দেশে সবাই ভ্যাকসিন নেবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে, সবাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে পরম করুণাময়ের কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা।

ক্যালগেরির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লুবনা জাহান বলেন, ঈদের দিন সময় বের করে বাংলাদেশের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দেশের সবাই ভাল থাকবে, করোনামুক্ত হবে দেশ, পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা।

বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বিজ্ঞানের কল্যাণে উত্তর আমেরিকায় এবারের ঈদ ভিন্ন আমেজেই উদযাপিত হচ্ছে। দীর্ঘ সামাজিক বিচ্ছিন্নতার পর বিধিনিষেধ মুক্ত কোলাহলমুখর পরিবেশ উজ্জীবিত করেছে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিকে। জন্মভূমিতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশে বসবাসকারী পরিবার পরিজন নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও কাজ করছে সমভাবে। তবে বিশ্বাস করি কোভ্যাক্স-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন কমিটিতে চার কৃতি বাঙালির অন্তর্ভুক্তি অচিরেই বাংলাদেশকে আলোর পথ দেখাবে।

ঈদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ক্যালগেরির কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সোহাগ হাসান বলেন, খুব মিস করি শৈশবের সেই আনন্দের ঈদকে। সেই দিন, সময় আর কখনই ফিরে পাওয়ার নয়। ব্যস্ততাময় এই প্রবাস জীবনে পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে যদিও ঈদ করি, কিন্তু সেই সময়ের ঈদ এখন কেবলই স্মৃতি।

কানাডায় গতবছর সর্বপ্রথম ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তারপর থেকে কানাডা সরকার, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং সর্বোপরি কানাডিয়ানদের সহযোগিতায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন কমেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী ৭৮ শতাংশ কানাডিয়ান অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আর পুরোপুরি ভ্যাকসিনেটেড হয়েছেন ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৪৪ শতাংশ কানাডিয়ান। 

অন্যদিকে আলবার্টা প্রদেশে চলতি বছর ১ জুলাই থেকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রদেশটিতে এরইমধ্যে ৭০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দেওয়া হয়েছে। কানাডার জনস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকার দুই ডোজ গ্রহণকারীরা এখন আলিঙ্গন করতে পারবেন।

জেডএস