কোরিয়ায় রোবট বানিয়ে বাংলাদেশি তরুণের চমক
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের কোম্পানি ‘নিউবিলিটি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি তরুণ লাবিব তাজওয়ার রহমান। সম্প্রতি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছে দিতে দুই সহযোগী মিলে রোবট তৈরি করে বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন।
কথায় আছে, ম্যান ইজ এস বিগ এস হিজ ড্রিম। চেষ্টা করলে মানুষ তার স্বপ্নের সমান সুন্দর ও বিশ্বাসের সমান বড় হতে পারে। লক্ষ্য স্থির করে পরিশ্রমের মাধ্যমে যিনি বিশ্বাস করেন তিনিই বেঁচে থাকেন। কোনো দুঃখ মালিন্য তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
বিজ্ঞাপন
লাবিবের ছোট ভাই সেরিব্রাল পালসি রোগের কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অক্ষম ছিল। ভাইয়ের মৃত্যুর পর কঠিন আঘাত পান লাবিব। সেই কষ্টকে বুকে চাপা দিয়ে যে বয়সে শিক্ষার্থী হিসেবে থাকার কথা ছিল। মাত্র ২০ বছর বয়সেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়ার সময় থেকে লাবিব ও তার বন্ধুদের পৃথিবী বিখ্যাত আমাজন এবং হুন্দাই এর মতো দক্ষিণ কোরিয়ার নামিদামি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে লাবিব দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পরিচয় হয় অ্যান্ড্রু লি ও সিউংহো চো (‘নিউবিলিটি’র বাকি দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা) এর সঙ্গে। তারা তিনজন নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত কনরাড অ্যাওয়ার্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনজনেই ছিলেন ফাইনালিস্ট। আর এখান থেকেই তাদের বন্ধুত্বের যাত্রা শুরু হয়।
লাবিব বলেন, প্রতিযোগিতার পর বহুদিন পর্যন্ত আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। সবসময় ভাবতাম তিনজনে মিলে কিছু একটা উদ্ভাবন করা যায় কি না! শেষ পর্যন্ত আমরা ‘নিউবিলিটি’ গড়ে তুললাম। প্রাথমিকভাবে আমরা গেমিংয়ে আনুষঙ্গিক বানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। এ আইডিয়া নিয়ে আমরা কয়েক বছর কাজও করেছি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষ দ্বারা পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার বিকল্প খুঁজছিল। দক্ষিণ কোরিয়ায় হোম ডেলিভারির বিশাল সেক্টর রয়েছে এবং দেশটিতে ই-কমার্সের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছিল। সেই থেকে আমরা ডেলিভারি রোবট বানানোর সিদ্ধান্ত নিই।
তিনি বলেন, রোবটটি অর্ডার করা খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার সংগ্রহ করে হোম ডেলিভারি দেবে। ডেলিভারি ম্যান যা করেন, কোনো মানুষ ছাড়া এখন থেকে রোবটটিও তাই করবে। ‘নিউবিলিটি’ মূলত রোবট তৈরি করে। আমাদের রোবটগুলো ডেলিভারি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে। এ জন্য হুন্দাই মোটরসের কাছ থেকে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে ‘নিউবিলিটি’।
লাবিবের সাফল্যের মধ্যে আরও রয়েছে, তিনি ‘ইনক্লুশনএক্স’ নামে বাংলাদেশে একটি মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশন সার্ভিস চালু করেছেন। এছাড়া তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিক্স সোসাইটির সহ-সভাপতি। ‘স্ট্যানফোর্ড ডিজ্যাবিলিটি ল্যাঙ্গুয়েজ গাইড’ নামক একটি বইও লিখেছেন তিনি। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো লাবিবের লেখা এ বই এখন স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনে প্রদর্শিত রয়েছে এবং আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে লক্ষ্য স্থির করে কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের বিকল্প নেই- বলেন বাংলাদেশি এ তরুণ উদ্যোক্তা।
আরএইচ