নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাসরত পাঁচ নারী সেখানকার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি করেছেন।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে ডা. ফেরদৌস খন্দকার নানাভাবে নারী রোগীদের যৌন হয়রানি করে আসছেন। তারা গলাব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে গেলেও তিনি অযৌক্তিকভাবে দেহের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে থাকেন। 

এতে আরও বলা হয়েছে, অনেক সময় ডা. ফেরদৌস নারীদের আংশিক পোশাক খুলতে বলেন। কিশোরীরা পর্যন্ত রেহায় পায় না তার হাত থেকে। 

নিউইয়র্কের ইংরেজি গণমাধ্যম দ্য সিটি, জ্যাকসন হাইটস পোস্ট এবং কমিউনিটির বাংলা ভাষার পত্রিকা সাপ্তাহিক নবযুগ ও আজকালে উঠে এসেছে যে, গত কয়েক দশক ধরে ডা. ফেরদৌস যৌন হয়রানি করে আসছেন। তার শিকার হয়েছেন অন্তত কয়েক ডজন নারী ও কিশোরী। 

এর আগে, এসব ঘটনা সামনে আসায় ডা. ফেরদৌস তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা করেছিলেন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। পাশাপাশি বিবাদীর আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধের জন্য ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে ফের মামলা দায়ের করা হলো।

মামলা দায়ের করা ওই পাঁচ নারীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার বলেন, মানহানির মামলা করার জন্য ডা. খন্দকারকে বাকি জীবন অনুশোচনা করে কাটাতে হবে। তিনি মনে করেছিলেন, মামলা করলে তার হয়রানির শিকার নারীরা চুপসে যাবেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। অবমাননার শিকার অন্য নারীরাও এখন এগিয়ে এসেছেন।

এ বিষয়ে ডা. খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই নিউজটি কি করতেই হবে? বিষয়টি অনেক পুরনো। এটি পরিকল্পিতভাবে আবার সামনে আনা হয়েছে। 

গত বছর মানহানির মামলা চলাকালে ডা. খন্দকার বলেছিলেন, তিনি কাউকে যৌন হয়রানি করেননি, কখনো কাউকে উত্যক্ত করেননি। তাছাড়া তিনি কারণ ছাড়া কোনো নারীর স্পর্শকাতর স্থান পরীক্ষাও করেননি।

ইংরেজি পত্রিকা দ্য সিটি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, এক তরুণী কীভাবে ডা. খন্দকারের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। হয়রানির বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৩ বছর বয়সী ওই তরুণী বলেন, তিনি ডা. খন্দকারের কাছে গিয়েছিলেন নিয়মমাফিক পরীক্ষা করাতে। 

পরে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করলে ডা. খন্দকার ওই তরুণীর শার্ট খুলতে বলেন। এক পর্যায়ে গলা পর্যন্ত শার্ট খুলতে বাধ্য করে ডা. খন্দকার ওই নারীর স্পর্শকাতর স্থানে স্টেথোস্কোপ রাখেন এবং স্পর্শ করেন। পরে তাকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে ওই তরুণী বের হয়ে যান। 
 
ওই তরুণী জানান, তিনি বিষয়টি তার মাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মা ডা. খন্দকারকে মোকাবিলা করতে চাননি। পরে সেদিনই তরুণী বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুকে পোস্ট দেন। তবে জানান যে, এটি তার এক বন্ধুর অভিজ্ঞতা।  

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায় যে, ওই তরুণী ফেসবুকের ওই পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমার এক বন্ধু আজ সকালে নিয়মিত চেক-আপের জন্য গেলে ওই চিকিৎসক তাকে নিগৃহীত করেন। এতে আমার মেয়ে বন্ধুটি এতটাই আঘাত পেয়েছিল যে, সে সঠিক পদক্ষেপ পর্যন্ত নিতে পারেনি। আপনার চিকিৎসকই যদি এমন কাজ করে, তবে তা হয়ে পড়ে একেবারেই অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।’

কয়েক মাসের পরিক্রমায় ওই পোস্টটি ঘিরে মনোযোগ বাড়তে থাকে। অন্যরাও তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নিগৃহীত হওয়ার কথা জানান। গত জুনে তিনি সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগগুলো পোস্ট করেন। 

এ ঘটনায় অনেকে ডা. খন্দকারের মেডিকেল লাইসেন্স বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে চেঞ্জ ডট অর্গে আবেদন জানান। তাদের আবেদনে সাড়ে চার হাজারের বেশি লোক সই করেন। 

ওই তরুণী বলেন, সেই ঘটনা কয়েক দিন পর্যন্ত আমার কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার বয়স ছিল খুবই কম। কীভাবে বলতে হবে, বুঝতে পারছিলাম না। আবার আমি একেবারে অজ্ঞও ছিলাম না। আমি জানতাম, এভাবে কোনো চিকিৎসক কাউকে পরীক্ষা করেন না। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিনি ওই সময় তার কথা শেয়ার করতে প্রস্তুত ছিলেন না।

তিনি বলেন, তখন আমি কথাগুলো কারও সঙ্গে শেয়ার করতে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি আমার কথা এখন বলতে পারি। আমি জানি, আমি কে। আমি এখন অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলি।

মামলা করা ওই পাঁচ নারী ক্ষতিপূরণ দাবি করার পাশাপাশি চিকিৎসকের চেম্বারে তাদের আটকে রাখা, মানসিক যন্ত্রণা, জেন্ডার সহিংসতা ও বৈষম্য, চিকিৎসাগত অপব্যবহার, শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতার জন্য তার শাস্তি দাবি করেছেন।