ব্রিটেনে বাংলাদেশি কারী ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ) বর্ণাঢ্য আয়োজনে ডায়মন্ড জুবিলী সেলিব্রেশনের সঙ্গে ১৫তম বিসিএ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করবে।

আগামী ৭ নভেম্বর লন্ডনের বিখ্যাত ওটু ইন্টারকন্টিনালে ব্রিটেনে কারি ইন্ডাস্ট্রির মর্যাদাপূর্ণ এ অ্যাওয়ার্ড সেলিব্রিটি ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা ও প্রদান করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রিটেনের ‘বেস্ট কারী হাউস’ ও ‘শেফ অব দ্যা ইয়ার’ নির্বাচনের জন্য ধারাবাহিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

অ্যাওয়ার্ড প্রদান সামনে রেখে ১১ অক্টোবর (সোমবার) দুপুর ২টায় লন্ডনের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিসিএ রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতা। ব্রিটেনের দুই শতাধিক রেস্টুরেন্ট প্রতিযোগীর মধ্য থেকে যাচাই–বাছাই করে ৪০টি রেস্টুরেন্টকে এ প্রতিযোগিতার জন্য সর্ট লিস্ট করা হয়। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টের সঙ্গে টেকওয়ে-ও যুক্ত হয়েছে।

বিসিএ রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ার ব্রিটেনে বাংলাদেশি কারী ইন্ডাস্ট্রির একটি জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বাচাই করা ৪০টি রেস্টুরেন্টকে তাদের ব্যবসায় নেওয়া নতুন ক্রিয়েটিভ চিন্তার সমন্বয়, ডিজাইন ও ডেকোর, উদ্ভাবিত মৌলিক কারী ডিস, খাবারের গুণগত মান, পরিবেশন এবং হাইজিং স্ট্যান্ডার্ড এবং কাস্টমারদের মন্তব্য ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়।

প্রতিযোগিতা থেকে সেরা ১০টি রেস্টুরেন্টকে ৭ নভেম্বর লন্ডনের বিখ্যাত ওটু ইন্টারকন্টিনালে বিসিএ’র ১৫তম অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হবে।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লর্ড রামি রানজার সিবিই, মিনিস্টার পল স্কলি এমপি, সিমা মালোর্থা এমপি, আফসানা বেগম এমপি ও গ্যারেথ টমাস এমপি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- হানসলো চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার ডারকিং, কোবরা বিয়ারের সেইল ডিরেক্টর সামসুন সোহিল, কেবক্সের সিইও সেলিমা ভ্যালারী, স্কয়ার মাইল ইন্সরেন্সের ডিরেক্টর ডেভিড রয়স্টোন, পেটাপের ডিরেক্টর সাহেদ আহমেদ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান ঝুনু। বিসিএ’র পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএ প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম, সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী, বিসিএ অ্যাওয়ার্ড কনভেনার জামাল উদ্দিন মকদ্দস, সাবেক প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ এমবিই ও কামাল ইয়াকুব, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ওলি খান এমবিই প্রমুখ।

লর্ড রামি রানজার সিবিই বলেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে এ দেশের প্রবাসীরা যেমন অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন, তেমনি ব্রিটেনের খাবার সংস্কৃতিতেও তারা রাখছেন অনুকরণীয় অবদান, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। বিসিএর ধারাবাহিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানকে কমিউনিটির সেবায় উজ্জ্বল উদাহরণ বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন লর্ড রামি রানজার।

মন্ত্রী পল স্কলি এমপি বলেছেন, বাংলাদেশি কারী ইন্ডাস্ট্রি করোনা মহামারি সময়ে এনএইচ এস স্টাফ ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের পাশে থেকে প্রমাণ করেছে এ ইন্ডাস্ট্রি কতটা কমিউনিটিবান্ধব। তিনি বিসিএর ডায়মন্ড জুবিলী সময়ের কারী অ্যাওয়ার্ড প্রদানকে গোটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনুপ্রেরণা বলে অভিহিত করেন।

আমাদের খাবার সংস্কৃতিতে বাংলাদেশি কারী ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় অবদান রাখছে। আপনি যেখানেই থাকুন বা যান না কেন, খাবার খেতে আপনার পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশি কারী ও ক্যুজিনের নামটি আপনার চোখে ভাসবে বলে মন্তব্য করেছেন সিমা মালহোত্রা এমপি। তিনি বিসিএ রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ারের প্রশংসা করে বলেন- এ ধরনের উদ্যোগ কারী শিল্পকে নিঃসন্দেহে আরও সমৃদ্ধ করবে।

আফসানা বেগম এমপি হাউস অব লর্ডসে বিসিএর এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আমাদের অর্জনগুলোকে সামনে রেখে এখন প্রয়োজন এরকম ভেন্যুতে মূলধারার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করা। যাতে করে আমাদের ন্যায্য ভয়েস সহজে, সঠিক জায়গায় দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।

আফসানা বেগম তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমাদের সমস্যা ও দাবিগুলো উচ্চমহলে জানাতে ঐক্যবদ্ধ ও জোরালো কণ্ঠের বিকল্প নেই।

গ্যারেথ টমাস এমপি নিজেকে কারী লাভার আখ্যা দিয়ে বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে কারী ইন্ডাস্ট্রির অবদানকে সামনে নিয়ে আমাদের উচিত বাংলাদেশি কারী ইন্ডাস্ট্রির বিবদমান সমস্যা নিরসন করে ইন্ডাস্ট্রিকে সার্বিক সহায়তা করা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না- কারী শিল্প এখন শুধু জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে না, এটি ব্রিটেনের খাবারের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।

বিসিএ রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ারের হেড মুজিবুর রহমান ঝুনু বলেন, বিসিএর এ প্রতিযোগিতা ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়েগুলোর সেরা মান এবং সেরা প্রতিভা বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এবারই আমরা রেস্টুরেন্টের সঙ্গে টেকওয়েগুলোকে প্রতিযোগিতায় সম্পৃক্ত করেছি। করোনা মহামারিতে টেকওয়েগুলো ব্রিটেনের কারী লাভারর্সদের বাংলাদেশি কারী পছন্দমতো পৌঁছে দিয়ে সেবার পরিধি বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। তিনি হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

বিসিএ সভাপতি এম এ মুনিম বলেছেন, আমরা বিসিএর ৬০ বছর পূর্তির বছরে ১৫তম বিসিএ কারী অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান করতে পেরে গর্বিত। বিসিএ কারী অ্যাওয়ার্ড করোনা পরবর্তী সময়ের বিবদমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, স্টাফসহ কারী ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতায় ব্রিটেনে সেরা মান ও সেরা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশি ক্যুজিনকে কারী লাভার্সদের কাছে তুলে ধরবে। তিনি বিসিএর সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আরও উজ্জ্বলভাবে কারী শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে বিসিএ।

বিসিএ সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেছেন, করোনা মহামারির মতো দুর্যোগেও বাংলাদেশি কারী ইন্ডাস্ট্রি কমিউনিটির পাশে থেকে কাজ করেছে। বিসিএ সাংগঠনিকভাবে রেস্টুরেন্টগুলোর বিভিন্ন পজিটিভ দিক কাস্টমারদের কাছে তুলে ধরতে কাজ করছে। খাবারের গুণগত মান, নতুন নতুন খাবার এবং কাস্টমার কেয়ার ইত্যাদি বিষয়ে আরও দক্ষতা অর্জনে এ প্রতিযোগিতা বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

বিসিএ রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ারের বিচারক প্যানেলে ছিলেন- লর্ড রামি রানজার সিবিই, মিনিস্টার পল স্কলি এমপি, সিমা মালহোত্রা এমপি, আফসানা বেগম এমপি, গ্যারেথ টমাস এমপি ও হানসলো চেম্বার এন্ড কমার্সের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার ডারকিং।

অনুষ্ঠানে বিসিএর বিভিন্ন রিজওনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এসএসএইচ