তুরস্কের মুদ্রা লিরার দরপতনে সর্বনিম্ন রেকর্ড গড়েছে। ২০০৫ সালে তুরস্কের নতুন মুদ্রা লিরা চালু হয়। লিরা চালু হওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে লিরার মান বেশ ভালো ছিল। 

২০১৪ সাল থেকে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে লিরার দরপতন শুরু হয়। ২০০৬ সালে তুর্কি এক লিরার মান ছিল বাংলাদেশি ৫২ টাকা, ২০০৭ সালে ৪৮ টাকা, ২০০৮ সালে ৫৮ টাকা, ২০০৯ সালে ৪২ টাকা, ২০১০ সালে ৪৬ টাকা, ২০১১ সালে ৪৫ টাকা, ২০১২ সালে ৪৫ টাকা, ২০১৩ সালে ৪৫ টাকা, ২০১৪ সালে ৩৫ টাকা, ২০১৫ সালে ৩২ টাকা, ২০১৬ সালে ২৬ টাকা, ২০১৭ সালে ২১ টাকা, ২০১৮ সালে ২১ টাকা, ২০১৯ সালে ১৫ টাকা, ২০২০ সালে ১৪ টাকা, ২০২১ এর শুরুতে ১১ টাকা থাকলেও তা বর্তমানে ৬-৭ টাকায় এসে পৌঁছেছে। 

লিরার সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ২০০৮ সালে। তখন এক তুর্কি লিরায় ৫৮ টাকা পাওয়া যেত। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের পর থেকে তুরস্কে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয়। যা এখন সর্বনিম্ন রেকর্ড গড়েছে। তুরস্ক ও তুরস্কের অধীনস্থ দ্বীপ দেশ নর্থ সাইপ্রাসে লিরা ব্যবহৃত হয়। 

১৯৭৪ সালে সাইপ্রাস দ্বীপে দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। যার একটি অংশ গ্রিক সাইপ্রাস, আর অপর অংশ তুর্কি বা নর্থ সাইপ্রাস। এক দ্বীপ হলেও দুই দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, মুদ্রা, জীবনযাত্রার মান, রাস্তাঘাট, শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছুই যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এক দেশের সাথে অন্য দেশের কোনো কিছুতেই মিল নেই।

বর্তমানে নর্থ সাইপ্রাসে প্রায় ৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছে। সেখানে বসবাসরত যেসব বাংলাদেশিরা চাকরি করে তারা মাসে দুই হাজার লিরা থেকে ৫ হাজার লিরা পর্যন্ত বেতন পায়। সাধারণত বাসা ভাড়া, খাবার খরচ মিলিয়ে এক হাজার লিরার মতো ব্যয় হয়। মাস শেষে দেশে ২ হাজার লিরা পাঠালে আগে যেখানে বাংলাদেশি ৫০ হাজারের বেশি আসত সেখানে এখন ১০ হাজার টাকারও নিচে নেমে গেছে। বলতে গেলে এখন দেশে টাকা পাঠানোর মত কোনো অবস্থায় নেই।

এমন শোচনীয় অবস্থায় সেখানে বসবারত বাংলাদেশিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের দুর্দশার কথাও জানাচ্ছে। প্রতিদিন লিরার মান কমে যাচ্ছে, সকালে এক রেট হলে বিকেলে আরেক রেট, আবার রাতে হয়তো আরও কমে যাচ্ছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাবি, রাতে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ টাকা নিয়ে ঘুমালেও সকালে উঠে দেখা যায় সেটা ৫০ হাজার টাকা হয়ে গেছে।

কেউ কেউ এই মুদ্রাস্ফীতির জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের একঘেয়েমি সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন। এ রকম চলতে থাকলে সেখানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ফেরত আসার উদ্বেগ জানিয়েছে। 

অন্যদিকে তুরস্কে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করে। তাদের অবস্থাও খুব শোচনীয়। এ রকম চলতে থাকলে হয়তো তাদেরও দেশে ফেরত আসতে হবে। তুরস্ক থেকে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।

ওএফ