ইতালি আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে রোববার (২৮ নভেম্বর)। দীর্ঘ প্রায় নয় বছর পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আগ্রহের শেষ নেই।

এবারের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দুটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। একটি প্যানেলে রয়েছেন সভাপতি পদপ্রার্থী ইতালি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন। অন্য প্যানেলে রয়েছেন, সভাপতি পদপ্রার্থী বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ রব মিন্টু।

ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের দাওয়াতপত্র দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদূতের হাতে আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়েছেন ইতালি আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মো. সাইদ ও সদস্য জসিম উদ্দিন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম লোকমান হোসেন।

সম্মেলনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও চিঠি দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, এ সম্মেলনে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অংশ নিচ্ছেন না। একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, সম্মেলনকে তারা সমর্থন করছেন না। 

এদিকে, ইউরোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান একটি চিঠিতে ২৮ নভেম্বরের সম্মেলন আপাতত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি ও নির্বাচন কমিশন মনে করছে, তাদের এ আহ্বান অযৌক্তিক ও মনগড়া। কারণ দীর্ঘ নয় বছর ইতালি আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। একটি সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে সম্মেলনের বিকল্প নেই। 

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম লোকমান হোসেন বলেন, রোববার যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা নেতাকর্মীদের দীর্ঘ নয় বছরের প্রত্যাশা। সাংগঠনিক নিয়ম মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, কার্যকরী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের সম্মতিক্রমে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি এ সম্মেলন। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নেওয়া নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। এখন তারা না এলে আমাদের কিছু করার নেই। 

কে এম লোকমান হোসেনের দাবি, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে ইতালি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দল গোছাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা জানেন, সম্মেলনে অংশ নিলে তাদের ভরাডুবি হবে। এ ভয়ে তারা সম্মেলনে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। 

ইউরোপ আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিতের চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, ইউরোপ আওয়ামী লীগ সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। তারাও প্রধানমন্ত্রীর সম্মান রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এখনো তারা একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। এর চেয়ে ব্যর্থতা আর কী হতে পারে। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের সই করা একটি চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, যাতে ২৮ নভেম্বরের সম্মেলনকে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে এ চিঠিতে। 

এ বিষয়ে ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী ইদ্রিস ফরাজি বলেন, সম্মেলন আমাদের সঙ্গে আলাপ না করেই আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইউরোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়নি। সেই সম্মেলনে আমরা কীভাবে অংশ নেব। 

তাদের সঙ্গে ইতালি আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও নির্বাচন কমিশন একাধিক বার আলোচনা করা সত্ত্বেও কেন তারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে হাজী ইদ্রিস ফরাজি বলেন, তারা আমাদেরকে নিয়ে বসবে কেন, আমরা তাদের নিয়ে বসব। তারা বলে যে, আমরা নাকি কিছু না।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাণী সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন হতে পারে প্রধানমন্ত্রী পুরোপুরি অবগত নন যে, এটি কোথায় ব্যবহার হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, তাদের সম্মেলন বন্ধ করতে বলা হলে তারা রাজি না হওয়ায় আজ (২৭ নভেম্বর) ড. শাম্মী আহমেদ সম্মেলন বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছেন। এ নির্দেশ না মানলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএইচ