বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দিল্লি ও ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের আরও ১৮টি শহরে মৈত্রী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতেও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে দিবসটি। 

আবুধাবির স্থানীয় একটি হোটেলে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ এবং ভারতের সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবু জাফর ও ভারতের রাষ্ট্রদূত সুঞ্জয় সুধির দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও বন্ধুপ্রতিম ভারতের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহমর্মিতা এবং নিঃস্বার্থ সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে মিশে গেছে ভারতের ১৮ হাজার শহীদের রক্ত; যা আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে এবং দৃঢ় ভিত্তিমূল স্থাপন করেছে দু’দেশের বন্ধুত্বের। 

তিনি উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন, ভারতীয় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আশুগঞ্জে একটি যুদ্ধস্মারক নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০২১ সাল উভয় দেশের বন্ধুত্বের একটি মাইলফলক বছর হয়ে থাকবে, কেননা বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে তেমনি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন করছে। ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিক্রমায় উভয় দেশ নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, ব্যবসা, জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থার সংযোগ, প্রতিরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাসহ নানা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে উভয় দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। 

রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবু জাফর বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতির উদাহরণ দিতে গিয়ে আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি দেশ, যার মাথাপিছু আয় গত এক দশকে প্রায় দিগুণ হয়ে ২৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। একইসাথে দারিদ্র্য এবং চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ২০% এবং ১২% এবং মেয়ে শিশুদের স্কুল অন্তর্ভুক্তির হার ৯৬%; যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উভয়ের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদূরপ্রসারী ও নতুন মাত্রা নেবে।

ভারতের রাষ্ট্রদূত সুঞ্জয় সুধির তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান চমৎকার পরিসরে মৈত্রী দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তিনি বলেন, দুই দেশের মৈত্রীর সূচনা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে অভিন্ন আত্মত্যাগ স্বীকার করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ সোনালী অধ্যায় পার করছে এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় ভারত অবদান রাখতে পেরে গর্বিত এবং আনন্দিত। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী রচিত হয়েছিল, তা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে। 

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ-ভারতের কূটনীতিক, স্থানীয় স্বনামধন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ ও ভারতের প্রবাসী কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। চলতি বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দুদেশের বন্ধুত্বের অনন্য ভিত্তি এবং বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের স্মরণীয় অগ্রযাত্রার সাক্ষ্য হিসেবে উভয় দেশ শুধুমাত্র দিল্লি ও ঢাকা নয়, বিশ্বের আরও ১৮টি শহরে মৈত্রী দিবস উদযাপন করছে।

এনএফ