মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের ৫০ বছর ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) কুয়ালালামপুরে একটি হোটেলের বলরুমে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ান মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত তান শ্রী ভিগ্নেশ্বরন, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উপমন্ত্রী দাতুক হাজি আওয়াং বিন হাশিম, মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য তুয়ান আহমেদ ফাহমি বিন ফাজদিল, মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস তুলে ধরে সরকারের নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় নাগরিকদের ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্মাননা পুরস্কার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। শহীদ ভারতীয় সৈন্য এবং ভারতীয় নাগরিকদের স্মরণে আশুগঞ্জে একটি যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন আছে।

তিনি বলেন, আমাদের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্ব উদযাপনের জন্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথভাবে বন্ধুত্ব দিবস উদযাপনে সম্মত হয়েছেন। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ায় যৌথভাবে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার স্বতন্ত্র সম্মান ও বিশেষত্ব পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করার প্রস্তুতি চলছে। যেহেতু মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ যেটি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে আমি এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানগুলোর অংশ হতে পেরে গর্বিত।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বি এন রেড্ডি বলেন, মহামারি করোনার অব্যাহত চ্যালেঞ্জ এবং একটি জটিল বৈশ্বিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ঢাকা ও নয়াদিল্লি ছাড়াও বিশ্বের অন্তত ১৮টি শহরে এ মৈত্রী দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এতো বড় আকারে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যৌথভাবে এ ধরনের মাইলফলক উদযাপনের চেষ্টা আগে কোনো রাষ্ট্র করেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের আদর্শিক মানচিত্রকেও বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, অভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং ভাষার এ বন্ধন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর একসঙ্গে থাকতে না পারার মতো মিথ্যা তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামও বর্বরতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের অনিবার্যতা প্রমাণ করেছিল।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ১০ দিন আগে ৬ ডিসেম্বর ভারত ও ভুটান স্বাধীন এবং সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বের ১৮ টি দেশে মৈত্রী দিবস উদযাপন করছে।

চলতি বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় দুদেশের প্রধানমন্ত্রী ৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন।

আইএসএইচ