ইউরোপ হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক সমৃদ্ধ মহাদেশ। ইউরোপ যে শুধু ইতিহাসে সমৃদ্ধ তা নয়। অর্থনৈতিক উন্নতিও সাধন করেছে মহাদেশটি। কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব কিংবা আধুনিক প্রযুক্তি- অধিকাংশই ইউরোপের অবদান। ফলে ইউরোপের নাম সমুজ্জ্বল।

উন্নত জীবনের জন্য সবাই ইউরোপে পাড়ি জমাতে চায়। পরিকল্পনা করলে খুব সহজেই যে যার অবস্থান থেকে ইউরোপে যেতে পারেন এবং নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন। চলুন জেনে নেই কী কী উপায়ে ইউরোপের যাওয়া ও বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায়।

প্রধানত পাঁচটি উপায়ে আপনি ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন। প্রথমত- হাইলি কোয়ালিফাইড ওয়ার্কার বা উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী হিসেবে। প্রফেশনাল, গবেষক, ছাত্র, ভলেন্টিয়ার বা অবৈতনিক কর্মী হিসেবে এ সুযোগ পাওয়া যাবে। এছাড়া টুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণ করতে এসে যদি কেউ পর্তুগাল, স্পেন এবং ইতালিতে চাকরি খুঁজে পান তাহলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন। আজকের আলোচনা শুধু উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীদের বিষয়ে। 

ইইউ ব্লু-কার্ড কী?
উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের জন্য এটি একটি স্কিম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের দেশের উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের ইইউ বসবাস এবং কাজ করার অধিকার দেয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় আপনার অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী এবং কাজের দক্ষতা থাকতে হবে। ডেনমার্ক এবং আয়ারল্যান্ড ছাড়া ইইউয়ের বাকি ২৫টি দেশে এই প্রোগ্রামের আওতায় বসবাস এবং চাকরি করতে পারবেন। 

ইইউ ব্লু-কার্ডের জন্য প্রতিটি দেশের আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। চলুন জেনে নেই পর্তুগালের প্রেক্ষাপটে ব্লু-কার্ডের নিয়ম। 

যা যা দরকার 
পর্তুগালের যেকোনো কোম্পানিতে কমপক্ষে এক বছরের চাকরির চুক্তিপত্র বা নিয়োগপত্র লাগবে। ওই চাকরির বেতন অবশ্যই মাসিক ২৪ হাজার ৫৩৫ ইউরো হতে হবে (পর্তুগালের গড় বেতন কাঠামোর ১ দশমিক ৫ গুণ)।

আবেদনকারীর পেশা পর্তুগালের আইন অনুযায়ী স্বীকৃত হতে হবে। রেগুলেটেড চাকরির ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হবে। নন-রেগুলেটর চাকরির ক্ষেত্রে উচ্চ পেশাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে।

মেডিকেল ইনস্যুরেন্স এবং ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট অর্থাৎ পাসপোর্ট, রেসিডেন্ট কার্ড (যারা ইতিমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশে আছেন তাদের ক্ষেত্রে) লাগবে। 

যেভাবে চাকরি খুঁজবেন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য একটি চাকরির সাইট রয়েছে ইউরেস (EURES) নামে। এখানে বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার চাকরি খোঁজার সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে কাঙ্ক্ষিত দেশের চাকরি খোঁজা যাবে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে চাকরির সংস্থান করা যাবে। 

কোথায় আবেদন করবেন
ইইউ ব্লু-কার্ড প্রোগ্রামের আওতায় পর্তুগালের যেতে হলে প্রথমে একটি স্বল্পমেয়াদী ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করতে হবে। পর্তুগালের ক্ষেত্রে সাধারণত ডি-৩ ভিসা।

ভিসা আবেদনের জন্য পর্তুগালে বা ইইউ-এর যে দেশে আপনি চাকরি পেয়েছেন তার চুক্তিপত্রের কপি অথবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, পেশাগত সার্টিফিকেট, রিটার্ন টিকেট এবং পাসপোর্ট সহকারে সংশ্লিষ্ট অ্যাম্বাসিতে জমা দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাম্বাসি কার্যক্রম ভিএসএফ-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সেক্ষেত্রে ভিএসএফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে জমা দিতে হবে।

পর্তুগালে প্রবেশের পর পর্তুগাল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের (SEF) অ্যাপয়নমেন্ট নিতে হবে আর্টিকেল ১২১-(এ) টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য। অ্যাপয়নমেন্টের তারিখে কাজের চুক্তিপত্র (উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে), বসবাসের ঠিকানা, সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, নিজ দেশের এবং পর্তুগালের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং ইতোপূর্বে অন্য কোনো দেশে থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রথমে দুই বছরের জন্য অস্থায়ী রেসিডেন্ট পার্মিট পাওয়া যাবে। পরবর্তীতে নবায়ন করলে তিন বছরের মেয়াদ প্রদান করা হবে।

ইইউ ব্লু-কার্ডের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে চাকরি ও বেতনের হিসেব ঠিক থাকলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা একশ ভাগ। পরবর্তীতে পর্তুগালের রেসিডেন্ট পেতেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে ইতোপূর্বে ইউরোপের কোনো দেশে ভিসা আবেদন করে রিফিউজ হয়ে থাকলে অথবা কোনো অপরাধের দায়ে ইউরোপের কোনো দেশ থেকে আপনাকে ফেরত পাঠানো হয়ে থাকলে ভিসা আবেদন গ্রহণ হবে না। তবে পর্তুগালে আসার পর কোনো কারণে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আবেদন রিফিউজ করলে আপিল করার অধিকার থাকবে।

পর্তুগালের রেসিডেন্ট কার্ড পাবার পর কোনো কারণে চাকরি চলে গেলে বা রেসিডেন্ট কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন চাকরি পাওয়ার আগে কার্ড নবায়ন করা যাবে। এছাড়া ইচ্ছা করলে চাকরি ছেড়ে ব্যবসাও করা যাবে।

৫ বছর অস্থায়ী রেসিডেন্ট হিসেবে বসবাসের পর পর্তুগিজ ভাষা শিক্ষার সনদ থাকলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি কার্ড বা লং টাইম রেসিডেন্ট কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। একইসঙ্গে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। আবেদনের তিন মাস থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভ করা যায়।

ইইউ ব্লু-কার্ডের ক্ষেত্রে ইউরোপের সকল দেশে সাধারণত একই নিয়ম। তবে পার্থক্যটা হয় দেশের গড় বেতনে। ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশভেদে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনি যে পেশাগত কাজে বা যে ধরনের পেশায় যেতে চাচ্ছেন সেই পেশায় কোন দেশে লোকবল বেশি প্রয়োজন। সেদিকটি বিবেচনায় নিয়ে চেষ্টা করলে ইতিবাচক ফল আসবে দ্রুত। 

ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী, পর্তুগাল/এইচকে