যুক্তরাজ্যে ভাষাসৈনিক পীর হবিবুর রহমানের স্মরণসভা
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে উপমহাদেশের বাম রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব পীর হবিবুর রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) লন্ডনে স্থানীয় একটি হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পীর হবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন ইউকে।
সভা থেকে পীর হবিবুর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক এবং একুশে পদক দেওয়ার দাবি জানানো হয়। পীর হবিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আজিজ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহিব উদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় এ দোয়া ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে পীর হবিবুর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, বাইতুল আমান জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মালিক দোয়া পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার কাউন্সিলর আহবাব হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ২৬শে টিভির চেয়ারম্যান, মানবাধিকার নেতা আব্দুল আহাদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবেদ আলী, পীর হবিবুর রহমানের ছেলে মনজুর হোসেন।
বিজ্ঞাপন
প্রধান অতিথি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার কাউন্সিলর আহবাব হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ১৮ বছর হয়ে গেল, পীর হবিবুর রহমানকে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়া হলো না। তিনি বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা। কর্মবীর মানুষটি, যিনি মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেলেন, তার অবদানের স্বীকৃতি একটা পদক জীবদ্দশায় পেলে খুশি হতেন। না পেলে কিছু আসে যায় না। তার অবদান তুলনাহীন। আমাদের উচিত তাকে সম্মান জানানো। সেজন্যই পদক দেওয়ার দাবি জানানো। পীর হবিবুর রহমান অনেক বড় মাপের নেতা ছিলেন। তিনি আদর্শের রাজনীতি করে গেছেন। নীতিচ্যুত হননি। যদি হতেন তাহলে বড় মন্ত্রী হতে পারতেন।
স্পিকার কাউন্সিলর আহবাব হোসেন বলেন, আজকের স্মরণসভাটি অন্যরকম তাৎপর্যবহ। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
পীর হবিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে বিশেষ অতিথি রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার নেতা আব্দুল আহাদ চৌধুরী বলেন, সবাই আওয়াজ তুলুন যাতে এ মহান ভাষাসৈনিককে একুশে পদক দেওয়া হয়। আমি আমার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।
বিশেষ অতিথি প্রবীণ সাংবাদিক লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, আমার মামার বন্ধু ছিলেন পীর সাহেব। সেই সূত্রে তাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। তিনি অনেক বড় মাপের রাজনীতিক ছিলেন। তার মতো আর কেউ সিলেটে জন্ম নেবেন কি না জানি না। তিনি দেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের রাজনীতি করে গেছেন। নিজের পরিবারের জন্যে কিছু করেননি। তিনি সত্যিকার অর্থেই মাটি ও মানুষের রাজনীতি করেছিলেন।
বিশেষ অতিথি কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে সভাপতি আবেদ আলী বলেন, পীর সাহেব ছিলেন আমাদের রাজনীতির গুরু। পীর হবিবুর রহমান, বরুন রায়, মনি সিংহ, তাদের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমরা প্রগতিশীল রাজনীতি করি। তিনি পীর হবিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পীর সাহেব অনেক বড় মাপের ভাষা সৈনিক ছিলেন।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পীর হবিবুর রহমানের ছেলে মনজুর হোসেন বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের কার্যক্রমে সহযোগিতা করার আশ্বাস ব্যক্ত করেন।
পীর হবিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে আরও বক্তব্য রাখেন— সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ, এম এ করিম, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সৈয়দ আহমেদ হাসান, এনামুল হক, আব্দুল হক, তহুরা আলী ও এম এ আলী, বড় ছেলে মোজাফফর হোসেন লুকু, শামিম আহমেদ, ইসমাইল হোসেন লিটন, আখলাকুন-নবি চৌধুরি জুয়েল।
সমাপনী বক্তব্যে পীর হবিবুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি আজিজ চৌধুরী স্মরণসভায় উপস্থিত হওয়ায় সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের প্রয়াত নেতা সম্পর্কে আপনাদের আজকের স্মৃতিচারণ ফাউন্ডেশনের জন্য অনন্য এক পাওয়া।
স্মরণসভায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসএসএইচ