বজরা শাহি মসজিদ ও মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

মোগল স্থাপত্য ইসলামি, পারস্য ও ভারতীয় স্থাপত্যের এক সংমিশ্রণ। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রসারিত মুঘল সাম্রাজ্যে এই স্থাপত্যশৈলীটি বিকশিত হয়ে ওঠে। মোগল স্থাপত্যশৈলীর অনেক নিদর্শন ভারত, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে দেখতে পাওয়া যায়। আজ আমরা সে রকমই একটি মোগল স্থাপত্য সম্পর্কে জানবো ইনশাআল্লাহ।

বজরা শাহি মসজিদ, মোগল স্থাপত্যশৈলীর উজ্জ্বল নিদর্শন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জেলা নোয়াখালীর প্রাণকেন্দ্র মাইজদী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা নামক স্থানে এর অবস্থান। গুগল ম্যাপের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে এই মসজিদের দুরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার।

মোগল স্মৃতিবিজড়িত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার আমান উল্লাহ খান। প্রায় তিন শ বছর আগে, ১৭৪১ সালে দিল্লির বিখ্যাত জামে মসজিদের আদলে এই মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি।  যা আজও মোগল স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে।

জানা যায়, জমিদার আমান উল্লাহ তার বাড়ির সামনে ৩০ একর জমির ওপর উঁচু পারযুক্ত একটি বিশাল দিঘি খনন করেছিলেন। সেই দিঘির পশ্চিম পারেই নির্মাণ করা হয়েছিল আকর্ষণীয় তোরণবিশিষ্ট ঐতিহাসিক এই মসজিদ। প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য, ৭৪ ফুট প্রস্থ ও ২০ ফুট উচ্চতার তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

মসজিদকে মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভিত তৈরি করা হয়েছিল। দৃষ্টিনন্দন মার্বেল পাথরে অলংকৃত করা হয়েছিল গম্বুজগুলো। বাহারি রঙের পাথর ও ইসলামিক প্যাটার্ন ডিজাইন এই মসজিদের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও রয়েছে তুর্কি ও ইরানি প্লোরাল ডিজাইরে সংমিশ্রণ। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি ধনুকাকৃতি দরজা। প্রবেশপথের ওপরই রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। পশ্চিমের দেয়ালে আছে কারুকার্যখচিত তিনটি মেহরাব।

মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহর বিশেষ অনুরোধে মক্কা শরিফের বাসিন্দা, তৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হজরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী ঐতিহাসিক এই মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন। তাঁর বংশধররা যোগ্যতা অনুসারে আজও এই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী ওই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বহু মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায় করে।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব বিভাগ ঐতিহাসিক মসজিদটির ঐতিহ্য রক্ষার্থে এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।