হজে তালবিয়া পড়ার নিয়ম। ছবি : সংগৃহীত

হজ ও ওমরাহ পালনার্থীরা ইহরাম গ্রহণের পর থেকেই ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...’ বা তালবিয়া পাঠ করেন। এই পবিত্র ধ্বনিতে প্রভুর দরবারে হাজির হওয়ার বিনীত ঘোষণা দেন। তালবিয়া পাঠের নিয়ম ও প্রাসঙ্গিক মাসআলা নিয়ে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।

পুরুষ তালবিয়া জোরে পড়বেন, নারী পড়বেন আস্তে

♦ পুরুষ উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং নারীরা পড়বেন নিম্নস্বরে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা: ১০০, গুনইয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা: ৭৪, আদ্দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা: ৪৮৪)

সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আমার নিকটে জিবরাইল (আ.) এলেন এবং বললেন, আমি যেন আমার সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দেই। (তিরমিজি, হাদিস: ১/১৭১)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নারীরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৮৮২)

তালবিয়া যেভাবে পাঠ করতে হবে

♦ তালবিয়া পুরোটা পাঠ করতে হবে। কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়াও মাকরূহ। (মানাসিক, পৃষ্ঠা: ১০২, আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা: ৪৮৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ১২৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তালবিয়া শেষ পর্যন্ত পাঠ করো। কেননা এটি রাসুল (সা.)-এর তালবিয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৩৬৩৮) 

♦ তালবিয়ার দোয়ার স্থানে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা তাইয়্যিবা বা কোনো জিকির পাঠ করলেও ইহরাম সম্পন্ন হবে। কিন্তু তালবিয়া ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করা মাকরূহ। তাই তালবিয়া পাঠ একান্ত অসম্ভব হলে আল্লাহ তাআলার কোনো জিকিরের মাধ্যমে ইহরাম গ্রহণ করবে। (মানাসিক: ১০২, গুনয়াতুন নাসিক: ৭৬, আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা: ৪৮৩)

বিখ্যাত তাবেয়ি তাউস (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, এক ব্যক্তি তালবিয়ার জায়গায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছে। তিনি বললেন, তার ইহরাম সম্পন্ন হয়েছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৯৩৫)

নারীদের তালবিয়া পাঠের মাসআলা

♦ নারীরা বিশেষ অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব, সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম গ্রহণ করতে পারবেন। হজের অন্যান্য কাজও করা যাবে। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামাজ পড়া জায়েজ নয়।  

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীরা ঋতুস্রাব বা নেফাস অবস্থায় মিকাতে এলে গোসল করবেন এবং ইহরাম গ্রহণ করবেন। অতঃপর হজের আমল সম্পন্ন করবেন, তবে তওয়াফ ব্যতীত। (আবু দাউদ: ১/২৪৩)

তালবিয়া ও তালবিয়ার উচ্চারণ

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর তালবিয়া হলো-

আরবি :

 لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ : লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।

অর্থ : আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নে‘মত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস : ২৮১১)