বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থিত ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

আল-মারকাজুল ইসলামি আস-সাক্বাফি। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থিত ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটি পশ্চিম ইউরোপে ইসলামি শিক্ষার প্রচার- প্রসার ও ইসলামি সংস্কৃতিচর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ইউরোপ ভূখণ্ডে হেরার জ্যোতির প্রোজ্জ্বল মশাল হিসেবে ভাস্বর এই শিক্ষালয়। পরিকল্পিত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দ্বীনি দাওয়াতের প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে এই প্রতিষ্ঠান।

প্রাথমিক অবস্থায় সেন্টারের স্থাপনাটি প্রাচ্য জাদুঘর ও ব্রাসেলসের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের অংশ ছিল। যেটি বেলজিয়ামের রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এবং ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত।

সৌদি সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৬৭ সালে রাজা বুদাউন মসজিদ ও ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই জাদুঘর সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজকে উপহার হিসেবে দেন। সে বছরই বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ স্থাপনটি পুননির্মাণ ও মসজিদ হিসেবে তৈরি করার জন্য একটি বাজেট অনুমোদন করে কাজ শুরু করে।

এই ইতিবাচক পদক্ষেপের পর ১৯৬৮ সালে বেলজিয়াম সরকারের ইসলামকে দেশের স্বীকৃত ধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার মাধ্যমে ইউরোপ মহাদেশে ইসলামের মোড় পরিবর্তন হতে শুরু করে। ইসলামের ক্রমবর্ধমান শান্তিময় প্রভাব সর্বত্র আলো ছড়াতে শুরু করে। কারণ এটাই ছিল ইউরোপ ভূখণ্ডে  ইসলাম ও মুসলমানের উপস্থিতির প্রথম সরকারি স্বীকৃতি।

১৯৬৮ সালের শেষের দিকে বেলজিক সরকার এ সেন্টারকে সেদেশের প্রথম মসজিদ বলে অনুমোদন দেয়। ইসলামকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও প্রথম মসজিদের অনুমোদনের পর ১৯৭৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রণালয় বেলজিক স্কুলে অধ্যয়নরত মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামবিষয়ক পড়াশোনার অনুমতি দেয়।

১৯৭৮ সালে সৌদি বাদশাহ খালেদ এই নতুন ইসলামিক সেন্টারের উদ্বোধন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে এখনো ‘রাবেতাতুল আ’লামিল ইসলামি’ তথা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ এই সেন্টার তত্ত্বাবধান করে আসছে।

এই সেন্টারের ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচির আওতায় ১৯৮৩ সালে ব্রাসেলসে ইউরোপে প্রথম ইসলামি ইনস্টিটিউট ‘আল-মা’হাদুল ইসলামি আল-ইউরুব্বি’ বা ‘ইউরোপ ইসলামিক একাডেমি’র যাত্রা শুরু হয়। এই প্রতিষ্ঠান ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছে অবিরত। এখানকার গ্র্যাজুয়েটদের বেলজিয়ামের স্কুলগুলোতে ইসলামিয়্যাত বা ইসলামবিষয়ক পাঠদানের জন্য শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বেলজিক স্কুলগুলোতে ইসলামিয়াত পড়ানোর জন্য এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। উপরন্তু বেলজিয়ামের প্রায় সাতশ’র বেশি মসজিদে এখান থেকে ইমাম নিয়োগ দেওয়া হয়।
 
বর্তমানে যেসব শিক্ষকার্যক্রম চলমান
এক. ইসলামি স্কুল। দুই. আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স। তিন. মেয়েদের জন্য পৃথক বালিকা স্কুল। চার. নওমুসলিমদের জন্য বেসিক ইসলামি শিক্ষা কোর্স। পাঁচ. দৈনিক ও সাপ্তাহিক দরসুল কোরআন।

ইসলামিক সেন্টারের দাওয়াতি কার্যক্রম
এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও ঈদের নামাজের ব্যবস্থাপনা। দুই. মুসলমানদের প্রশ্নের আলোকে ফতোয়া তথা শরীয়ত সম্মত সমাধান প্রদান। তিন. বিভিন্ন উপলক্ষে সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করা। চার. বেলজিয়ামে বসবাসরত সব মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া।

সাংস্কৃতিক-প্রচারণামূলক কার্যক্রম
এক. সেন্টারের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিকে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধি করা। দুই. নামাজের সময়সূচি প্রস্তুত, ছাপা ও বিতরণ করা। তিন. সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও দৈনিক দরসের ব্যবস্থাপনা করা।

-কুয়েত থেকে প্রকাশিত আরবি ম্যাগাজিন ‘আল-মুজতামা’ অবলম্বনে

লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, ককসবাজার।