বন্ধুত্ব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সবার জীবনেই এমন একজন থাকে যাকে সে নিজের একেবারে কাছের মনে করে, মনের সব কথা খুলে বলে। তবে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা জরুরি। কারণ ভালো বন্ধু জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে, মন্দ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। 

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা, আয়াত, ১১৯) 

এই আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে, সত্যবাদীদের সাহচর্য এবং তাদের মতো আমলের মাধ্যমেই তাকওয়া লাভ হয়। আর এভাবেই কেউ ধ্বংস থেকে মুক্তি পেতে পারে। প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারে। (ইবনে কাসীর)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া দান করবেন, যেদিন তার ঐ ছায়া ছাড়া আর অন্য কোন ছায়া থাকবে না; এর মধ্যে সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব স্থাপন করে এবং এই বন্ধুত্বের উপরেই তারা মিলিত হয় ও তারই উপর বিচ্ছিন্ন (পরলোকগত) হয়। (বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১)

মানুষ তার বন্ধুর দ্বারাই প্রভাবিত হয়, তাই সৎ ও ধার্মিক বন্ধুর সঙ্গ গ্রহণ করা উচিত, কারণ পৃথিবীতে খারাপ চরিত্রের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে পরকালে লজ্জা ও অনুশোচনার শেষ থাকবে না।

সৎসঙ্গী আর অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সৎসঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে, আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করলে কখনও তাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয়তো তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি : ২১০)।

মানুষ তার বন্ধুর দ্বারাই প্রভাবিত হয়, তাই সৎ ও ধার্মিক বন্ধুর সঙ্গ গ্রহণ করা উচিত, কারণ পৃথিবীতে খারাপ চরিত্রের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে পরকালে লজ্জা ও অনুশোচনার শেষ থাকবে না।

কোনো ভাল মানুষ যদি অসৎকর্মের লোকদের সাথে চলাফেরা করে তবে কিয়ামতের দিন তাকেও তাদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এ বিষয়ে সতর্ক করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। অতএব তোমাদের প্রত্যেকের বিবেচনা করে দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করছে।’(তিরমিজি, ২৩৭৮)

‘হজরত আবূ মূসা আল আশ‘আরী ও আবূ জার আল গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন-‘একাকী থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকা উত্তম। তবে অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকী থাকা উত্তম।’

এ বিষয়ে আরেক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কর্মকে পছন্দ করল, কেয়ামতের দিন সে তাদের দলভূক্ত হয়েই উত্থিত হবে এবং সেও তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে, যদিও সে নিজে তা করেনি।’ (কানযুল ‘উম্মাল,২৪৭৩০)।

অসৎ বন্ধু সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জালিম সেদিন নিজের দুই হাত দংশন করতে করতে বলবে, হায় দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৮)

এই আয়াত থেকে জানা যায়, যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখা ঠিক নয়। কারণ, মানুষ সৎ সঙ্গে ভালো ও অসৎ সঙ্গে খারাপ হয়ে যায়। বেশির ভাগ মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ অসৎ বন্ধু ও খারাপ সঙ্গীদের সাথে উঠা বসা। তাই পবিত্র কোরআনে সৎ সঙ্গী গ্রহণ এবং অসৎ সঙ্গী বর্জন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তাই বন্ধু হিসেবে ভাল মানুষ না পাওয়া গেলে সহচর গ্রহণ না করে একাকী চলা উত্তম। এই বিষয়ে একটি হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবূ মূসা আল আশ‘আরী ও আবূ জার আল গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন-‘একাকী থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকা উত্তম। তবে অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকী থাকা উত্তম।’ (মুসান্নাফু ইবন আবী শায়বাহ, ৩৫৯৬৫, আল মুসতাদরাক আলাস সাহীহায়ন,- ৫৪৬৬)

এনটি/