মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। হেদায়েতের আলোকরশ্মি এই গ্রন্থে তিনি মানুষের জন্য কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ, আলো-অন্ধকার সব কিছু বর্ণনা করেছেন। বলেছেন দুনিয়া ও আখেরাতে সফল এবং ক্ষতিগ্রস্ত কারা। 

কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ ۚ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ

যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। এবং আখেরাতে সে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।- (সূরা আলে ইমরান : ৮৫)

আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসিসরগণ বলেন, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করার পর তাঁর আনীত ধর্ম ইসলামই একমাত্র মুক্তির পথ। তাই ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অবলম্বন করলে আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর যারা অন্য ধর্ম গ্রহণ করবে তারা কোরআনের ভাষায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আখেরাতে জাহান্নামের ভয়ানক শাস্তি থেকে বাঁচার কোনো উপায় তার থাকবে না। -( মারেফুল কোরআন, ২/৯০)

আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসিসরগণ বলেন, যে সমস্ত কাফের মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান হওয়াকে অস্বীকার করেছে, তারা যখন কেয়ামতকে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে দেখতে পাবে, আর তাদের খারাপ পরিণতি তাদেরকে ঘিরে ধরবে, তখন তারা নিজেদের দুনিয়ার জীবনকে হেলায় নষ্ট করার জন্য আফসোস করতে থাকবে। আর তারা তখন তাদের পিঠে গুনাহের বোঝা বহন করতে থাকবে। তাদের এ বোঝা কতই না নিকৃষ্ট। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, এ উম্মতের যে কেউ ইহুদী হোক বা খ্রিস্টান, যে আমার কথা শুনবে অতঃপর আমি যে রিসালাত নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩)

যারা পরকালে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করবে 

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

قَدْ خَسِرَ الَّذِیْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَآءِ اللهِ حَتّٰۤی اِذَا جَآءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوْا یٰحَسْرَتَنَا عَلٰی مَا فَرَّطْنَا فِیْهَا وَ هُمْ یَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَهُمْ عَلٰی ظُهُوْرِهِمْ  اَلَا سَآءَ مَا یَزِرُوْنَ

যারা আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়াকে অস্বীকার করেছে, নিশ্চয়ই তারা অতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশেষে কিয়ামত যখন অকস্মাৎ তাদের সামনে এসে পড়বে তখন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা এ (কেয়ামত) সম্পর্কে বড় অবহেলা করেছি এবং তারা (তখন) তাদের পিঠে নিজেদের পাপের বোঝা বহন করবে। সাবধান! তারা যা বহন করবে তা অতি নিকৃষ্ট। -(সূরা আনআম: ৩১)

আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসিসরগণ বলেন, যে সমস্ত কাফের মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান হওয়াকে অস্বীকার করেছে, তারা যখন কেয়ামতকে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে দেখতে পাবে, আর তাদের খারাপ পরিণতি তাদেরকে ঘিরে ধরবে, তখন তারা নিজেদের দুনিয়ার জীবনকে হেলায় নষ্ট করার জন্য আফসোস করতে থাকবে। আর তারা তখন তাদের পিঠে গুনাহের বোঝা বহন করতে থাকবে। তাদের এ বোঝা কতই না নিকৃষ্ট। 

মানুষের প্রকৃত বন্ধু হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ মানুষকে ভালবেসে তার জন্য কল্যাণের কথা বলেছেন। তাকে কল্যাণের পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণকর নানা বিষয়ের আলোচনা করেছেন। সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যরেখা এঁকে দিয়েছেন। আর শয়তান তো প্রকাশ্য শত্রু কিন্তু শয়তান অনেক-সময় বন্ধু সেজে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামত এমনভাবে সংঘটিত হবে যে, দু'জন লোক কোন কাপড় ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রসারিত করেছে, সেটাকে তারা আবার মোড়ানোর সময় পাবে না। কেয়ামত এমনভাবে হবে যে, একজন তার জলাধার ঠিক করছে কিন্তু সেটা থেকে পানি পান করার সময় পাবে না। কেয়ামত এমনভাবে হবে যে, তোমাদের কেউ তার গ্রাসটি মুখের দিকে নেওয়ার জন্য উঠিয়েছে কিন্তু সে সেটা খেতে সময় পাবে না। (বুখারী: ৬৫০৬; মুসলিম: ২৯৫৪)


যারা শয়তানকে  বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে

মানুষকে পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে অভিশপ্ত শয়তান। তাই শয়তানকে যারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে কোরআনে-

وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا وَّ لَاُضِلَّنَّهُمْ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمْ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَ مَنْ یَّتَّخِذِ الشَّیْطٰنَ وَلِیًّا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِیْنًا.

আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। এবং আমি তাদেরকে সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদেরকে (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। - (সূরা নিসা : ১১৮-১১৯)

মানুষের প্রকৃত বন্ধু হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ মানুষকে ভালবেসে তার জন্য কল্যাণের কথা বলেছেন। তাকে কল্যাণের পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণকর নানা বিষয়ের আলোচনা করেছেন। সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যরেখা এঁকে দিয়েছেন। আর শয়তান তো প্রকাশ্য শত্রু কিন্তু শয়তান অনেক-সময় বন্ধু সেজে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সে মানুষকে নানা রকম প্রলোভন দেয়। নানা রকম মিথ্যা আশা দেয়। এতে অনেক মানুষ তার এ বাহ্যিক বন্ধুত্ব দেখে ধোঁকায় পড়ে যায়। এমন মানুষকে কোরআনের ভাষায় ক্ষতিগ্রস্ত বলা হয়েছে।

এনটি