যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে বাম হাত ব্যবহার করা হাদিসের দৃষ্টিতে মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাত ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। বিশেষত পানাহারের ক্ষেত্রে বাম হাতের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে যেন ডান হাতে আহার করে, ডান হাতে পান করে, ডান হাতে গ্রহণ করে এবং ডান হাতে দান করে। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়, বাম হাতে পান করে, বাম হাতে দেয় এবং বাম হাতে গ্রহণ করে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৬৬)

বাম হাতে খাবার গ্রহণকারীকে তিরস্কার করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এবং বাম হাতের ব্যবহারকে অহংকারের চিহ্ন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসে এসেছে,

عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه أن رجلاً أكل عند النبي صلى الله عليه وسلم  بشماله، فقال: كل بيمينك» » ، قال: لا أستطيع، قال: «لا استطعت»، ما منعه إلا الكبر، قال: فما رفعها إلى فيه.

হজরত সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি ডান হাতে খাও। সে বলল আমি পারব না। রাসূল (সা.) বললেন: আর কখনো পারবেও না। একমাত্র অহংকারই তাকে ডান হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখল। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত উঠাতে পারেনি।’ –(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৭৬৬)

ওমর বিন আবু সালামা রা. বলেন, আমি শিশুবেলায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোলে (বসে খাবার সময়) আমার হাত পাত্রের যেখানে-সেখানে পড়ছিলো। তখন তিনি আমাকে বললেন,

 يَا غُلاَمُ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ 

‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাও, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের পাশ্বে থেকে খাও।’ -( বুখারী,৫৩৭৬, মুসলিম, ৫৩৮৮৮, মুসনাদে আহমাদ, ১৬৩৭৫)

উম্মুল মুমিনীন হজরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‎‘আলাইহি‎‎ ওয়াসাল্লাম‎ খানা, পান করা ও পরিধানের জন্য তার ডান হাত ব্যবহার করতেন, এ ছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য তিনি তার বাম‎‎ হাত ব্যবহার করতেন।’  -(আবু দাউদ: ৩০)

ফুকাহায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসগণ বলেন, যদি কোনো অসুস্থতা বা বিশেষ কারণে ডান হাত ব্যবহার করা না যায় তাহলে পানাহারের সময় বাম হাত ব্যবহার করা যাবে। 

তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু বাম হাতে পানাহারকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাই যথাসম্ভব তা পরিহার করা উচিত। কারণ আল্লাহ তায়ালা শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব ‎তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার ‎‎দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা ‎জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়।’ -(সূরা ফাতির: ৬)

অর্থাৎ, শয়তানকে কঠিন শত্রুই মনে করতে হবে, তার মিথ্যা প্রবঞ্চনা ও ধোঁকাবাজি থেকে এমনভাবে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে যেমন শত্রুর কবল থেকে বাঁচার জন্য মানুষ চেষ্টা করে থাকে। -( সূত্র : শরহে মুসলিম, ইমাম নববী ২/১৭২; ফাতহুল বারী ৯/৪৩৩; আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ১১/১১১)

এনটি