রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ‘আওকরা মসজিদ’। জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে অবস্থিত মসজিদটি প্রায় ২৫৪ বছরের পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

মসজিদটিকে ঘিরে স্থানীয়দের পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীদের আনাগোনা লেগে থাকে বছরজুড়ে। তবে অযত্ন-অবহেলায় দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে বিলীনের পথে ঐতিহাসিক এই মসজিদ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে মসজিদটি। গত ৩ বছর ধরে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে মসজিদটি পরিস্কার করে এর দেয়াল ঘেঁষে টিনসেট আর বেড়া দিয়ে মসজিদের অংশ সম্প্রসারণ করে নামাজ আদায় করছেন। তবে এখন আবার নতুন করে দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। 

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আওকরা মসজিদকে ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এটি সংস্কারে এখনও দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই।

 

এদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আওকরা মসজিদকে ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এটি সংস্কারে এখনও দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানান গেছে, প্রায় ২৫৪ বছর আগে উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে চলা বেলান নদীর তীরে মীর্জার মাঠের সীমানায় চিকন ইট ও দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি নির্মাণ করেন মির্জা লাল বেগ।

প্রতিষ্ঠার সময় মসজিদটির নাম কী রাখা হয়েছিল তা কেউ বলতে পারেন না। তবে কেউ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এর মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো। তা শুনে স্থানীয়রা ভাবতেন মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে স্থানীয় শব্দ ‘আওকরা’ (কথা বলা)-এর সঙ্গে মিলিয়ে মসজিদের নাম রাখা হয় ‘আওকরা মসজিদ’। 

মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজ আদায় করা শুরু করেছি আমরা। সরকার দ্রুত মসজিটি সংস্কার করলে আমার ঝুঁকিমুক্ত হয়ে নামাজ আদায় করতে পারতাম।

 

এখনো প্রতিধ্বনি শোনার আশায় মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় শব্দ করে কথা বলেন মানুষজন। কিন্তু মসজিদের দেওয়াল ফেটে নষ্ট হওয়ায় এবং গায়ে আগাছা জন্মানোয় আগের মতো আর আওয়াজ হয় না। 

পাকেরহাট গ্রামের রহিম শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল, তখন মির্জা লাল বেগ এখানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিল বলে লোকমুখে শুনছি। ব্রিটিশ সরকারের আমলে মুসলিমরা মসজিটির আশপাশের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে এটি অযত্ন অবহেলায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরবর্তীতে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি। এ মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মসজিদ সংস্কারের উদ্যোক্তাদের একজন মজনু রহমান ঢাকা পেস্টকে বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজ পড়ার উপযোগী করে তুলেছি। কিন্তু দেয়ালের ফাটলের কারণে আতঙ্কে থাকতে হয়। তিনি বলেন, প্রত্নতত্ব বিভাগ দ্রুত সংস্কার করলে এটি দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হতে পারে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মফিজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদটি পরিষ্কার করে টিনের ছাউনি, মাইক ও নলকুপ স্থাপন করে নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু দ্রুত সংস্কার না হলে ঐতিহ্যবাহী নির্দশনটি ধ্বংস হয়ে যাবে।

এখনো প্রতিধ্বনি শোনার আশায় মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া আসার সময় শব্দ করে কথা বলেন মানুষজন। কিন্তু মসজিদের দেওয়াল ফেটে নষ্ট হওয়ায় এবং গায়ে আগাছা জন্মানোয় আগের মতো আর আওয়াজ হয় না। 

 

মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজ আদায় করা শুরু করেছি আমরা। সরকার দ্রুত মসজিটি সংস্কার করলে আমার ঝুঁকিমুক্ত হয়ে নামাজ আদায় করতে পারতাম।

দিনাজপুর জেলার ঐতিহাসিক কান্তনগর প্রত্নতত্বিক জাদুঘর ও কান্তজির মন্দিরের সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. হাফিজুর রহমান মুঠফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক মসজিদটি পরিদর্শন করে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।

ইমরান আলী সোহাগ/এনটি