বুয়েনস আইরেসে অবস্থিত বাদশাহ ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে অবস্থিত বাদশাহ ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার। ল্যাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মসজিদও এটি। পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা ও প্রচারকেন্দ্র হিসেবেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলছে এটি। ইসলামের মানবিক দিকগুলোর হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনা ও মনোমুগদ্ধকর প্রদর্শনীর মাধ্যমে অমুসলিমদের ইসলামের সুমহান জীবনব্যবস্থার দিকে আহ্বানে সেন্টারটির অবদান অনস্বীকার্য।

সত্তরের দশকের শেষের দিকে যখন সৌদি সরকার আর্জেন্টিনার রাজধানীতে দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন থেকে এ সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আর্জেন্টিনার সাবেক রাষ্ট্রপতি কার্লোস মেনিমের সৌদি সফরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সমঝোতার পর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুখ দেখে। সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি কার্লোস সেন্টারটির জন্য ৩৪ হাজার বর্গমিটার  জায়গা সৌদি সরকারকে উপহার হিসেবে দেয়।

দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলোর মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার বিস্তারে এবং অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর লক্ষ্যে— সর্বোপরি এই অঞ্চলে বসবাসরত মুসলমানদের জন্য একটি বিশাল মসজিদের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ‘কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার’টি সৌদি স্থপতি জুহাইর ফয়েজের নকশায় নির্মিত আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন। ২০০০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হয়।

সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দুই হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত হয়েছে দুইতলা বিশিষ্ট বাদশাহ ফাহাদ জামে মসজিদ। এতে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় পারেন। দ্বিতীয় তলায় প্রায় পাঁচশজন নারীর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের সামনে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা রয়েছে। হারামাইন শরিফাইনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্প্রচারের জন্য প্রজেক্টরেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে এখানে বালক-বালিকাদের জন্য মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত দুইটি পৃথক ইসলামিক স্কুল রয়েছে। প্রত্যেক স্কুলে ১৬টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। পৃথক পৃথক কিন্ডারগার্ডেন রয়েছে। প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থাসহ বয়স্কদের জন্য আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স ও শরিয়াহ গ্র্যাজুয়েশন কোর্সও চলমান রয়েছে মাদরাসা দুইটিতে।

এখানে দশ হাজারের অধিক বই সমৃদ্ধ একটি বিশাল উন্মুক্ত লাইব্রেরি রয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় কোরআনের অনুবাদ ও তাফসিরসহ ইসলামবিষয়ক রকমারি বই রয়েছে লাইব্রেরিটিতে। সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য দৈনিক ও সাপ্তাহিক লেকচার এবং বিভিন্ন উপলক্ষে কর্মশালারও আয়োজন করা হয় লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে।

কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের অডিটোরিয়ামে উন্নত সাউন্ড সিস্টেম ও প্রজেক্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধাসম্বলিত পাঁচশ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। সেমিনার, ওয়ার্কশপ, প্রশিক্ষণ, একক লেকচার ও প্রশ্নোত্তরপর্বসহ প্রতি মাসে প্রায় ২০টি দাওয়াতি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। সব ধর্মের মানুষের জন্য অডিটোরিয়ামের সব অনুষ্ঠান উন্মুক্ত থাকে।

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এই মসজিদে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ আর জুমাবারে প্রায় একহাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করে। সেন্টারটির প্রশংসনীয় দাওয়াতি কার্যক্রমগুলো হলো-  অমুসলিমদের জন্য দৈনিক ইসলাম পরিচিতিমূলক প্রেজেন্টেশন, আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স, ইসলামি সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক পরিচিতিমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ‘ডিসকভার ইসলাম’ নামে সাপ্তাহিক রেডিও সম্প্রচার।