মুসল্লী ও সাধারণ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদ

দূর থেকে চোখে পড়বে মসজিদের মিনার। একটু সামনে গেলেই নজর কাড়বে পুরো মসজিদের নির্মাণশৈলী। আল কোরআন সাদৃশ্যে নির্মিত প্রধান ফটকের দুপাশে দাঁড়িয়ে নারিকেল গাছ। ছায়াঘেরা পরিবেশের সাথে মায়ার প্রতিচ্ছবি মসজিদজুড়ে। এ মসজিদের রয়েছে তিনটি প্রবেশ ফটক। মসজিদের দৃষ্টিনন্দন প্রশস্ত দুটি সিঁড়ি সহজেই আকৃষ্ট করছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীসহ সাধারণ দর্শনার্থীদের।

বলছিলাম রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদের কথা। এটি রংপুর নগরীর প্রাণ কেন্দ্রেই অবস্থিত। অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সৌন্দর্য আর নজড় কাড়া মসজিদের নির্মাণশৈলী দুটোই এখন আলোচনায়। এই মসজিদের সড়কের একপাশে রয়েছে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার। আর একটু এগিয়ে গেলে দেখা যাবে পর্যটন মোটেল।

রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদটি এখন যেভাবে নজর কাড়ছে, শুরুতে এমন ছিল না। ৩৫ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটি প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তীতে মোটর মালিক, শ্রমিক ও পরিবহনসহ সংশ্লিষ্টদের অর্থায়নে বদলে যায় এর অবকাঠামো। বর্তমানে রংপুর নগরের দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলোর মধ্যে এটি একটি। আকৃষ্ট করার মতো নির্মাণ শৈলীর কারণে বেশ পরিচিত পেয়েছে মসজিদটি।

আয়তনের দিক থেকেও এটি অনেক বড়। বর্তমানে মসজিদটি দোতলা হলেও নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে তিনতলা বিশিষ্ট। মসজিদের দুটি প্রশস্ত সিঁড়ি, দুটি সুউচ্চ মিনার, মেহরাব এবং দেয়ালে বসানো সোনালী রঙের টাইলস্ সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুন। মসজিদটির ভেতরের পরিসর অনেক বেশি হলেও কলাম বা পিলার কম হওয়ায় একেবারে শেষ প্রান্ত থেকেও খতিব বা ঈমামকে দেখা যায়। অজুখানা বড় হওয়ায় অনেক মুসল্লী একসঙ্গে অজু করতে পারেন

এই মসজিদের নিচতলায় ১৫ কাতার, দ্বিতীয় তলায় ১৭ এবং বারান্দায় ৪ কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেকটি কাতারে একসঙ্গে ৪০ জন মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবেন। রয়েছে বর্ধিত অংশ। সেই হিসেবে মসজিদটিতে কাতারবন্দি হয়ে একসঙ্গে কমপেক্ষ ১ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে শুক্রবার এই মসিজদে ২ হাজার বেশি বেশি মুসল্লি হয়ে থাকে। এ মসজিদে বিভিন্ন জেলা থেকে বাস টার্মিনালে আসা সাধারণ যাত্রী, দর্শনার্থী, পরিবহন শ্রমিকরা ছাড়াও স্থানীয়রা নামাজ আদায় করেন।  

এটি রংপুর বিভাগের মধ্যে বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এমন মসজিদ বিভাগের আর কোনো বাস টার্মিনালে নেই এবং এই বাস টার্মিনালও বিভাগের মধ্যে বৃহৎ ও আধুনিক।  প্রতিদিন এখান থেকে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতাযাত করেন কয়েকহাজার যাত্রী। তাদের কথা মাথায় রেখে বেশ বড় পরিসরেই নির্মাণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মসজিদটি।

মসজিদের শুধু নির্মাণ শৈলীর জন্য নয় শুক্রবার খতিবের বয়ান শোনার জন্য রংপুর বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য জেলা শহর থেকেও মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের আগে বয়ান শুরু হয় ১২টায়। প্রায় ১ ঘণ্টার বয়ান করেন খতিব। বয়ান শুনতে মুসল্লিরাও ১২টার আগেই চলে আসেন। বিশেষ করে সামনের কাতারে বসার জন্য অনেকেই ১১টা থেকে মসজিদে আসতে শুরু করেন।

মসজিদটি দেখতে আসা এক যুবকের সাথে কথা হয়। রেজাউল করিম জীবন নামের  এ দর্শনার্থী বলেন, রংপুরে কেরামতিয়া মসজিদ, মডেল মসজিদ, কোর্ট মসজিদ, রাধাবল্লভ জামে মসজিদ, আটতলা মসজিদসহ অনেক পুরাতন ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। এসবের মধ্যে বাস টার্মিনাল জামে মসজিদটির নির্মাণ শৈলী একটু ব্যতিক্রম। বিশেষ করে এখানকার প্রবেশ ফটক, মিনার আর প্রশস্ত সিঁড়ি যে কারো নজর কাড়বে।

স্থানীয় মুসল্লি হারুন অর রশিদ বলেন, অনেক দূর থেকে মসজিদের মিনার দেখা যায়। হঠাৎ করে চোখে পড়লে যে কারো মসজিদটি দেখার আগ্রহ জাগবে। আর সামনাসামনি এসে কেউ এর ভিতরে না ঢুকে ফিরে যাবার কথা হয়। প্রতিদিন দূরদূরান্তের অনেক মানুষ এই মসজিদতে নামাজ আদায় করেন। কেউ কেউ আবার দেখতে আসেন। বাড়ির পাশে এমন সুন্দর মসজিদ হওয়ায় তিনি আনন্দিত বলেও জানান।

ফুয়াদ হাসান নামের আরেক মুসল্লি বলেন, মসজিদের নির্মাণ শৈলী দেখে ভালোই লাগে। বিশেষ করে সিঁড়ি দুটি চমৎকার। দূর থেকে যেমন ভালো লাগে তেমনি কাছে এলেও ভালো লাগে। প্রতি শুক্রবার আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে জুমার নামাজ আদায় করে থাকি। 

রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জামে মসজিদের খাদেম বাহার আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই মসজিদের দায়িত্ব পালন করছেন। এই খাদেম জানান, মসজিদটি বাস টার্মিনালে হওয়ায় সবসময় লোকজন থাকে। সারাক্ষণ এই মসজিদের দরজা খোলা থাকে। এখানে স্থানীয় মুসল্লি ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নামাজ আদায় করেন। এছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজে খতিবের বয়ানের ভক্ত অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নগরীর বাইরের এলাকা ও অন্য জেলা থেকেও আসেন বলে জানান তিনি।

মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুর রশীদ বলেন, প্রতিষ্ঠার পরপরই এই মসজিদে মুসল্লিদের খেদমতে আছি। ৩৩ বছর ৩ মাস ধরে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অনেক মুসল্লি দূরদূরান্ত থেকে নামাজ আদায় করতে আসেন এই মসজিদে। আল্লাহর অশেষ রহমতে মসজিদের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। মসজিদের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণ শৈলী, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও  নির্মল পরিবেশ মুসল্লিদের ইবাদত বন্দেগির অনুকূল হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের সহস্রাধিকেরও বেশি মানুষ প্রতি জুমার দিনে নামাজ আদায় করেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনটি