বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন শায়খ ড. ইউসুফ আল-কারজাভি। ছবি : আল-জাজিরা।

শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারজাভি রহ. ছিলেন মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স -এর সাবেক চেয়ারম্যান। একই সাথে তিনি ছিলেন মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম নেতা। 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

ড. কারজাভি ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নীল নদের ব-দ্বীপ সাফত তুরাব গ্রামে ধর্মপ্রাণ এক দরিদ্র মুসলিম কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যা বর্তমানে মিশরের ঘারবিয়া গভর্নরেটের অন্তর্গত। দুই বছর বয়সে তার বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর তিনি তার চাচার কাছে পালিত হন ও বেড়ে উঠেন। নয় বছর বয়সে তিনি পুরো কোরআন হেফজ করেন।

এরপর তিনি তান্তার ইনস্টিটিউট অফ রিলিজিয়াস স্টাডিজে যোগ দেন এবং সেখানে নয় বছর অধ্যয়নের পর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তানতায় থাকাকালীন কারজাভি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার সাথে প্রথম দেখা করেন। সম্পৃক্ত হন ইখওয়ানুল মুসলিমিন তথা মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে। 

১৯৬১ সালে তিনি কাতারে প্রথম পাড়ি জমান। ১৯৭৩ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন।

দোহার মেসাইমির কবরস্থানে শায়খ ইউসুফ আল-কারাজাভির দাফনের পর তার রূহের মাগফেরাত কামনা

 

ব্যক্তিগত জীবন

মিশরীয় বশংদ্ভুত ড. কারযাজাভি কাতারে বসবাস করতেন। পারিবারিক জীবনে তিনি তিন পুত্র ও চার কন্যার পিতা। যাদের তিনজনই ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার কন্যা ইলহাম ইউসুফ আল কারজাভি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী। তার পুত্র আব্দুল রহমান ইউসুফ আল কারজাভি মিশরের একজন কবি ও রাজনৈতিক কর্মী।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

শায়খ কারজাভি ইখওয়ানুল মুসলিমের অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নাহ'র দ্বারা প্রভাবিত হন এবং ইখওয়ানুল মুসলিমিনে যোগদান করেন। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তাকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়।

মেসাইমির কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শায়খ আল-কারজাভির লাশ। ছবি : আল-জাজিরা।

 

পুরস্কার ও সম্মাননা

যুগের অন্যতম এই মুসলিম নেতা তার নানাকর্মের জন্য বেশ কিছু পুরষ্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৪১১ হিজরীতে ইসলামি অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৪১৩ হিজরিতে ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কারের জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়। মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত পদকটি লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে হাসান বাকলি পুরস্কারে সম্মানিত করে।

লেখালেখি ও সাহিত্যকর্ম

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তিনি অসংখ্য বই রচনা করেন। তার বেশ কিছু বই বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। 

তার রচিত ও বাংলায় অনুদিত কিছু বই:

সুন্নাহর সান্নিধ্যে,ইসলামি পুনর্জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা, 
ইসলামে হালাল হারামের বিধান,
ঈমান ও সুখ,
বুদ্ধিদীপ্ত জাগরণের প্রত্যাশায়,
ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী, 
আধুনিক যুগ ইসলাম কৌশল ও কর্মসূচী,
ইসলাম ও চরমপন্থা, ইসলাম ও শিল্পকলা,
ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ,
ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, 
ইসলামে এবাদতের পরিধি, 
ইসলামে দারিদ্র বিমোচন, 
ইসলামের যাকাতের বিধান, 
জেরুজালেম বিশ্ব মুসলিম সমস্যা, 
ইসলাম ও মানবিক মূল্যবোধ, 
আমাদের দাওয়াত: জীবনবিধান ও ইসলাম, 
মানুষ মর্যাদা ও সৃষ্টির উদ্দেশ্য, উ
মর ইবনে আবদুল আজিজ, 
আলিম ও স্বৈরশাসক, 
ইমাম হাসান আল বান্না, 
ইসলামের ব্যাপকতা তাকফির: কাফির ঘোষণায় বাড়াবাড়ি ও মূলনীতি,
ইমাম বান্নার পাঠশালা, 
অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে যাকাতের ভূমিকা, ইত্যাদি। 

শায়খ আল-কারজাভির জানাজার আগে দোহার মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব মসজিদে আসর নামাজের দৃশ্য। ছবি : আল-জাজিরা

 

মৃত্যু: 

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা শায়েখ ইউসুফ-আল-কারজাভি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

তিনি মানুষের কল্যাণে জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন। ইসলামী শরিয়াহ তথা খেলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নে জীবনব্যাপী কাজ করেছেন। মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত করণের ক্ষেত্রে কারজাভির ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তিনি বিশ্বের মুসলিম স্কলার এবং জনসাধারণের কাছে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে থাকবেন। 


সূত্র : উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য