প্রতীকী ছবি

আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাস স্থাপন ও ইসলামকে ধর্ম হিসেবে মেনে নেওয়ার পরই একজন মুসলমানের জন্য শরীয়তের যাবতীয় বিধান পালন করা ফরজ হয়ে যায়। ঈমানের পরই আসে নামাজ আদায়ের বিধান। রোজা, হজ, জাকাত- এসব বিধান নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য ফরজ। তবে সব সময় আল্লাহর ওপর ঈমান রাখা ও প্রতিদিন সময় মতো নামাজ পড়া সবার জন্য ফরজ। এতে অলসতা বা গড়িমসি করার কোনও সুযোগ নেই।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেকোনো অবস্থাতেই অবশ্যই আদায় করতে হয়। কেউ অসুস্থ হলেও নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনও বিধান নেই। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য বসে, শুয়ে অথবা ইশারায় নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে। তাই নামাজ থেকে দূরে সরে থাকার সুযোগ নেই। প্রতিদিন সময় মতো নামাজ আদায় করতে হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)

বলার অপেক্ষা রাখে না নামাজ বান্দা ও রবের মাঝে এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরি করে। নামাজের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর নিকবর্তী হয়। সময় মতো নামাজ আদায়ে যেমন সতর্ক হতে হয়। তেমনি কিছু সময় আছে যখন নামাজ পড়া মাকরুহ, এ সময়গুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।

এই সময়গুলোতে ফরজ, ওয়াজিব ও নফল কোনো ধরনের নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই। এমনকি কাজা নামাজও পড়া যাবে না। মাকরুহ সময়গুলো হলো—

এক. ফজর নামাজের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)।

দুই. সূর্য যখন মাথার ঠিক মাথার ওপরে থাকে।  (মুসলিম, হাদিস : ১১৮৫)

তিন. আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

হজরত উকবা বিন আমের আল জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) আমাদের তিন সময়ে নামাজ এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। ১. সূর্য উঠার সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। ২. সূর্য যখন মাথার ওপর ওঠে তখন থেকে পশ্চিমে হেলে পড়ার সময়টুকু। ৩. এবং সূর্য হলুদবর্ণ হওয়ার পর থেকে ডোবার আগ পর্যন্ত।’ -(বুখারি, হাদিস নম্বর ৫৫১ এবং মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১৮৫)

এ তিন সময় নামাজ পড়া নিষেধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে ফেকাহবিদ আলেমরা বলেন, সূর্য যখন ওঠে, যখন মাথার ওপর ওঠে এবং যখন ডুবে যায়- এ তিন সময় সূর্য পূজারিরা সূর্যকে সেজদা করে। তখন কেউ যদি নামাজ পড়ে তাহলে তাকেও সূর্য পূজারি মনে হতে পারে। এ জন্য এ সময় সব ধরনের নামাজ পড়া এবং সেজদাহ করা ইসলামী শরিয়ত মাকরুহে তাহরিমি তথা নিষেধ মনে করে।

তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার। তবে অনেকে প্রশ্ন করেন বা কোনও কোনও জায়গায় কিছুটা প্রচলন রয়েছে যে

এই তিন সময়ে নামাজের মতো অন্যান্য জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত নিষেধ।- এই প্রচলনটি কতটা সঠিক এ বিষয়ে জানতে চান অনেকে।

এ বিষয়ে আলেমরা বলেন, নামাজের মাকরুহ সময়গুলোতে জিকির-আজকার নিষেধ এমন ধারণা করা উচিত নয়। তাদের মতে, যে তিন ওয়াক্তে যেকোনো ধরনের নামাজ পড়া মাকরূহ সে ওয়াক্তের ব্যাপারে কারো কারো ধারণা এই যে, সে সময় জিকির-তিলাওয়াত, দোয়া-দরূদ পড়াও মাকরুহ। এটা সঠিক নয়। ওই ওয়াক্তগুলোতে জিকির-তিলাওয়াত, দোয়া-দরূদ সবই পড়া যায়। এটা মাকরুহ নয়। -(আল-কাউসার, প্রচলিত ভুল, রবিউস সানী/০৫)

প্রতিদিন এই তিন ওয়াক্ত ছাড়াও বিশেষ কিছু মুহুর্ত বা পরিস্থিতি আছে যখন নামাজ পড়া মাকরুহ। সেগুলো হলো-

এক. ইকামতের সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬০)

দুই. ঈদের নামাজের আগে ঈদগাহে কোনো নামাজ পড়া মাকরুহ। -( সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৮৪; আল-মাজমু : ৫/১৭; আলমুগনি : ২/২৭৯)

তিন. ঈদের নামাজের পরে ঘরেও কোনো নামাজ নেই, ঈদগাহেও নেই। -(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৩)

চার. সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নত পড়তে গেলে ফরজ নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, এমন সময় নামাজ পড়া মাকরুহ।

পাঁচ. খুব ক্ষুধা ও খানার প্রতি তীব্র চাহিদা হলে সে সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। এর ফলে খানার সঙ্গেই মন লেগে থাকবে, নামাজের সঙ্গে নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

নয়. প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

এনটি