একত্রে বা একাকী দোয়া করার সময় অনেকে কিবলার দিকে ফেরেন। আবার কেউ কেউ সবার দিকে কিংবা যেকোনো দিকে ফিরে দোয়া করেন। এর মধ্যে কোনটি সঠিক পন্থা— এটা অনেকে জানতে চান।

মূলত সাধারণ অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব। এটি দোয়ার আদব ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। তবে দোয়া পরিচালনাকারী যদি আগ থেকেই মজলিস বা সমবেতদের দিকে ফিরে থাকেন, তবে তখন তাদের দিকে ফিরে দোয়া করতে কোনো সমস্যা নেই। তা সুন্নতের পরিপন্থী হবে না। বরং উভয়টি হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। এক হাদিসে উমর (রা.) বলেন, ‘বদরের দিন রাসুল (সা.) কাফেরদের দিকে তাকালেন। ....অতঃপর কেবলামুখী হয়ে দুই হাত প্রসারিত করে উচ্চস্বরে দুআ করতে লাগলেন- আল্লাহুম্মা আনজিযলি মা ওয়াদ্তানি। তিনি এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করতে থাকলেন। একপর্যায়ে তার কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গেল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৬৩)

এক বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে আবদুল্লাহ জুল বাজাদাইন-এর কবরে দেখেছি। ... যখন তিনি তার দাফন থেকে ফারেগ হলেন— দুই হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন।’ (ফাতহুল বারি : ১১/১৪৮)

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, আবদুর রহমান ইবনে তারেক (রহ.) তার মা থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) যখন (তওয়াফ করতে করতে) দার আবু ইয়ালা কাছাকাছি পৌঁছতেন, তখন কেবলামুখী হয়ে দোয়া করতেন।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৯০৫৫)

তবে নবী কারিম (সা.) থেকে অনেক ক্ষেত্রে অন্য দিকে ফিরে দোয়া করার কথাও প্রমাণিত আছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল,! আমাদের বৃষ্টি দান করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। (রাসুল সা. কেবলা দিকে পিঠ দেওয়া অবস্থায়ই দোয়া করলেন) সঙ্গে সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। পুরা এক সপ্তাহ বৃষ্টি হলো। পরবর্তী জুমায় সে ব্যক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার করুন। আমরা তো ডুবে গেলাম। তখন রাসুল (সা.) দোয়া করলেন- আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা। সঙ্গে সঙ্গে মদিনার আকাশ থেকে মেঘ সরে গেল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩৪২)

অতএব দোয়া করার সময় সবার দিকে ফিরে দোয়া করা ঠিক আছে। এজাতীয় হাদিস থেকে বোঝা যায়, দোয়ার সময় কেবলামুখী হওয়া জরুরি নয়; বরং অন্য দিকে ফিরেও দোয়া করা জায়েজ। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই।

তথ্যসূত্র : আততারগিব ওয়াত তারহিব : পৃষ্ঠা : ৫৩০; শরহু মুসলিম, ইমাম নববি : ১২/৮৪; আল-আজকার, নববি, পৃষ্ঠা : ১৫; উমদাতুল কারি : ৭/৫০; আল-ইখতিয়ার : ১/২৪৬; মিরকাতুল মাফাতিহ : ৪/২১৮; হাশিয়াতুশ শিরওয়ানি আলা তুহফাতিল মুহতাজ : ২/১০৫