প্রতীকী ছবি

কায়িক শ্রমের বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ। মেধা-মনন, বুদ্ধি, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম কর্মক্ষমদের কাজে উৎসাহিত করেছে। উদাসীনতা, অবহেলা ও নির্লিপ্ততা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন— 

সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মী, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল।

(সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)

প্রচলিত নিয়মানুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগ দেওয়া মানে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে মেধা, চিন্তা ও শ্রম ব্যয় করা। মাসিক বেতনের বিনিময়ে তাদের প্রতিশ্রুত দায়িত্ব আদায় করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০১)

দায়িত্বশীলতা বড় আমানত
সঠিকভাবে ও যথাযথ মাধ্যমে দায়িত্ব পালন গুরুত্বপূর্ণ। এটি পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য। ইসলাম আমানত রক্ষায় জোর তাগিদ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন মানুষের বিচার-মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করো। আল্লাহ তোমাদের সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)

আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় না করা বা খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা করা মারাত্মক গুনাহ। রাসুল (সা.) এটাকে মুনাফিক বা বিশ্বাসঘাতকের চিহ্ন-দাগ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি; তা হলো- মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান মনে করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৮/১; ৫৯)

আনাস (রা.) বলেন, ‘এমন খুব কম হয়েছে যে, মহানবী (সা.) ভাষণ দিয়েছেন— অথচ তাতে এ কথা বলেননি, যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ইমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৪০৬)

আমানতের পরিধি ও সীমা ইসলামে অনেক প্রসারিত। চাকরিজীবী ও কর্মীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। সে সময় কাজ রেখে গল্প-গুজবে সময় নষ্ট করা কিংবা কাজে ফাঁকি দেওয়া খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত।

অফিসের জিনিসপত্র ও কাজে ব্যবহৃত সবকিছু কর্মীর কাছে আমানত। ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করা বা নষ্ট করা পুরোপুরি নিষেধ। শরিয়ত এটা সমর্থন করে না। তাই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি।

দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন
দায়িত্বশীলতা ও পূর্ণাঙ্গভাবে আমানত রক্ষা প্রত্যেকের আবশ্যিক কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি হতে হবে। কর্মীর কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ বুঝে না পেলে পরকালে অপরাধী হিসেবে শাস্তি পেতে হবে। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৪৪; তিরমিজি, হাদিস: ১২৪)

কর্মস্থলে কাজে অবহেলা বড় গুনাহ

দায়িত্ববান, সৎনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ঠিক সময়ে অফিসে আসেন। তারা কাজে ফাঁকি দেন না। কর্তব্য পালনে অবহেলা করেন। অলসতারও আশ্রয় নেন না। এমনকি সরকার, প্রতিষ্ঠান, মালিক ও কর্তৃপক্ষের অবাধ্য হন না। তাদের আদেশ-নিষেধ আন্তরিকতার সঙ্গে মেনে নেন। প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, কাজে ফাঁকি দেওয়া ও মিথ্যা বলা— এসব দোষ-ত্রুটি থেকে দূরে থাকেন। সুচারুরূপে কর্তব্য আদায় ও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ দেন।

ইসলাম নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে কাজের মান নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি ব্যক্তিকে তার কর্ম-পেশা ও দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞেস  করা হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন মালিকের কাছে তার আমানত প্রত্যর্পণ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)