জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ছবি, গেটি ইমেজ।

মসজিদ আল্লাহ তায়ালার ঘর। মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র। মসজিদে এসে রবের সামনে আত্মসমপর্ণ করেই প্রশান্তি খুঁজে পান একজন প্রকৃত মুমিন। মসজিদকে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট স্থান বলা হয়েছে।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বলেন, ইয়াহুদীদের একজন আলেম নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, পৃথিবীর মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন এবং বললেন, তুমি নীরব থাক যতক্ষণ জিবরীল (আ.) না আসেন।

অতঃপর সে নীরব থাকল এবং জিবরীল (আঃ) আসলেন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (আ,) উত্তরে বললেন, জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নন। কিন্তু আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞেস করব। 

অতঃপর জিবরীল (আ.) বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আল্লাহর এত নিকটে হয়েছিলাম, যত নিকটে ইতিপূর্বে হইনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে হয়েছিলেন? তিনি বললেন, তখন আমার মধ্যে ও তাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, পৃথিবীর নিকৃষ্টতর স্থান বাজারসমূহ এবং উৎকৃষ্টতর স্থান মসজিদ সমূহ’। -(ইবনু হিববান, ১৫৯৯; মিশকাত,৭৪১, পৃঃ ৭১)

পৃথিবীর সর্বোত্তম এই স্থানের মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যতা বজায় রাখা আবশ্যক। মসজিদে আওয়াজ করে, উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ, এতে করে মসজিদের সম্মান নষ্ট হয়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এমনকি তিনি শাস্তি দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। 

বর্ণিত হয়েছে, হজরত ওমর (রা.) মসজিদে আওয়াজ করার কারণে দুই ব্যক্তিকে শাসিয়ে দেন, তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি এই মদিনা শহরের বাসিন্দা হতে, তাহলে মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার কারণে আমি দুজনকেই কঠোর শাস্তি দিতাম।’ -(বুখারি, হাদিস : ৪৭০)

মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলার বিষয়টি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছেও অত্যন্ত অপছন্দের ছিল।  এক হাদিস থেকে জানা যায়, জনৈক ব্যক্তি জোরে কথা বললে রাসুল (সা.) রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাকে এসে ধমক দেন। -(বুখারি, হাদিস : ৪৭১)

বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে মসজিদে কথাবার্তার স্বর এতোটাই উঁচু হয়ে যায় যা শুধু কথার পর্যায়ে থাকে না, অনেকটা যেন বাজার বা পার্কের পরিবেশ তৈরি হয় আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে। নামাজের জামাত শুরুর আগে ইমাম মসজিদে আসার আগ মুহুর্তে কোনও কোনও মসজিদে এটা বেশি হয়ে থাকে। এ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন আল্লাহর রাসুল। এবং তিনি কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। -(মুসলিম, হাদিস : ১০০২)

এছাড়া মসজিদের অন্য জায়গাতেও অযথা কথা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘অর্থহীন কথাবার্তা ও কাজকর্ম থেকে নিজের আঁচল বাঁচিয়ে চলা ইসলামের অন্যতম শোভা ও সৌন্দর্য।’ -(সুনানে তিরমিজি : হাদিস ২৩১৭)

আল্লাহ তায়ালা প্রিয় বান্দাদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের বিবরণ তুলে ধরেছেন এভাবে-‘আর যখন তারা অহেতুক ও অনর্থক কাজকর্মের পাশ কেটে অতিক্রম করে তখন তারা ভদ্রতা বজায় রেখে পার হয়ে যায়।’ -(সুরা ফুরকান : আয়াত ৭২)

সফল মুমিনের পরিচয় বর্ণনা করেছেন এভাবে-‘আর যারা অর্থহীন কথা ও কাজ পরিহার করে ও তার প্রতি বিমুখতা প্রদর্শন করে।’ -(সুরা মুমিনুন : আয়াত ৩)

এনটি