প্রতীকী ছবি

সাদাদিধে জীবন যাপন ছিল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের অন্যতম অংশ। তিনি অনাড়ম্বরপূর্ণ ও দরিদ্রতা পছন্দ করতেন।  হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো, দরিদ্র থাকা অবস্থায় মৃত্যু দিও এবং কিয়ামত দিবসে দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর করো। 

এ কথা শুনে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এমন বলছেন কেন? তিনি বললেন, হে আয়েশা! তারা তো তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আয়েশা! তুমি প্রার্থনাকারী দরিদ্রকে ফিরিয়ে দিও না। যদি দেওয়ার মতো কিছু তোমার নিকট না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের টুকরা হলেও তাকে দিও। হে আয়েশা! তুমি দরিদ্রদের ভালোবাসবে এবং তাদেরকে তোমার সান্নিধ্যে রাখবে। তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তার সান্নিধ্যে রাখবেন। (তিরমিজি , হাদিস : ২৩৫২)

হজরত আয়শা (রা.) মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবিতকালে আমাদেরকে কয়েকবার শুধু পানি আর খেজুর খেয়েই দিন কাটাতে হয়েছিল। এমনকি, যেদিন তার মৃত্যু হয় সেদিনও আমাদের ঘরে পানি ও খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। (বোখারি)। 

সাদাসিধে জীপন যাপন করলেও নবীজি মানুষ ছিলেন। দুনিয়ার জীবন যাপনের জন্য তিনি প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ব্যবহার করতেন। নিজের ও পরিবারের থাকার জন্য তিনি ঘর নির্মাণ করেছিলেন।

মদিনায় হিজরত করার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে মসজিদে নববি নির্মাণ করেন। মসজিদে নববির পাশের ও সংলগ্ন ভূমির মালিক ছিলেন হারিস ইবনে নোমান (রা.)। সেখানে তাঁর বাড়ি ছিল। কিন্তু তিনি তা মহানবী (সা.)-এর প্রয়োজনে ছেড়ে দেন। তিনি উপহার হিসেবে ছেড়ে দিলেও রাসুল (সা.) তাঁকে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করেন। তাঁর পুরো বাড়িই রাসুল (সা.) ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হতো। (আল ওয়াফা বি-আহওয়ালিল মোস্তফা, পৃষ্ঠা-২৬০)

সেখানে মোট ৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়। অবকাঠামোতে কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল ব্যবহার করা হয়। চারটি ঘরের সামনে পাথরের দেয়াল বা বেড়া ছিল। অন্যগুলোর সামনে শক্ত মাটির দেয়াল ছিল, যেন কেউ সহজেই ঢুকে যেতে না পারে। প্রতিটি ঘরের ছিল দরজা ও জানালা। হাদিসের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, আয়েশা (রা.)-এর ঘরে এক পাল্লাবিশিষ্ট কাঠের দরজা ছিল এবং তার সামনে পর্দা ঝোলানো থাকত। কোনো কোনো ঘরের সামনে ছোট কক্ষও ছিল। সে ক্ষেত্রে মূল কক্ষে লাকড়ির তৈরি দরজা থাকত এবং ছোট কক্ষের দরজায় পর্দা ঝোলানো থাকত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরে সাধারণ পশমের তৈরি কাপড়ের পর্দা ব্যবহৃত হতো।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরগাছের ছাল। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৬)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাঁর ব্যবহৃত বালিশও ছিল চামড়ার তৈরি, যার ভেতরে ছিল খেজুরগাছের ছাল। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪১৪৬)

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর বর্ণনায়ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরের আসবাবের বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) একটি চাটাইয়ের ওপর শুয়ে ছিলেন। চাটাইয়ের ওপর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার বালিশ। আমি তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললাম। 

তিনি বলেন, কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কায়সার ও কিসরা ভোগ-বিলাসে মত্ত অথচ আপনি আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তাদের জন্য পার্থিব জীবন ও আমাদের জন্য পরকাল। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯১৩)

এনটি