ছবি : সংগৃহীত

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক যুগেই নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)। তিনি সব নবী-রাসুলদের সর্দার। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! আমি আপনাকে গোটা মানবজাতির জন্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২২)

মহানবী (সা.)-এর নবুয়তকে শক্তিশালী করার জন্য অন্য নবী-রাসুলদের মতো তাকেও দেওয়া হয়েছে অগণিত মুজিজা। তন্মধ্যে মিরাজ অন্যতম।

যেভাবে সংঘটিত হয়
মিরাজ কখন সংঘটিত হয় এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। মুসা ইবনে ওকবা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে মিরাজের ঘটনা হিজরতের ছয় মাস আগে সংঘটিত হয়। ইমাম নববী ও কুরতুবির মতে, মিরাজের ঘটনা মহানবী (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পাঁচ বছর পর ঘটেছে। ইবনে ইসহাক বলেন, মিরাজের  ঘটনা তখন ঘটেছিল, যখন ইসলাম আরবের সব গোত্রে ছড়িয়ে পড়েছিল।

ইমাম হরবি বলেন, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা রবিউস সানি মাসের ২৭ তারিখ রাতে হিজরতের এক বছর আগে ঘটেছিল। ইবনে কাসেম সাহাবি বলেন, নবুয়তপ্রাপ্তির ১৮ মাস পর এ ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ মতে, নবুয়তের দশম বর্ষে রজব মাসের ২৭ তারিখে মিরাজের  ঘটনা সংঘটিত হয়। তিবরানি (রহ.) বলেছেন, যে বছর মহানবী (সা.)-কে নবুয়ত দেওয়া হয়, সে বছরই মিরাজ  সংঘটিত হয়। কারো মতে হিজরতের ১৬ মাস আগে রমজান মাসে মেরাজ সংঘটিত হয়। (আর রাহিকুল মাখতুম)

ভ্রমণের সূচনা যেভাবে
হাদিসের ভাষ্য মতে, মিরাজের সূচনা হয় মসজিদে হারাম থেকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব মাসের ২৭-এর রজনীতে আল্লাহ তাআলার ঘরের হিজরের মাঝে শায়িত ছিলেন, এমন সময় হজরত  জিবরাইল (আ.) এসে জাগ্রত করে তাঁর বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করে দূষিত রক্ত বের করে আবার জোড়া লাগিয়ে দেন। অতঃপর বোরাকে করে সশরীরে বায়তুল মাকদাসে নিয়ে যান। বোরাক হলো এমন একটি প্রাণী, যা গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি আকৃতির একটি জন্তু। তার দুই উরুতে রয়েছে দুটি পাখা। তা দিয়ে সে পেছনের পায়ে ঝাপটা দেয়, আর সামনের দৃষ্টির শেষ সীমায় পা ফেলে। প্রিয় নবী (সা.) বায়তুল মাকদাসের দরজায় খুঁটির সঙ্গে বোরাকটি বেঁধে যাত্রাবিরতি করেন এবং সব নবীর ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন। (আর রাহিকুল মাখতুম)।

ঊর্ধ্ব গমনে মহানবী (সা.)
বায়তুল মাকদাসে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করার পর সিঁড়ি আনা হয়, যাতে নিচ থেকে ওপরে যাওয়ার জন্য ধাপ বানানো ছিল। তিনি সিঁড়ির সাহায্যে প্রথমে প্রথম আকাশে, অতঃপর অবশিষ্ট আকাশগুলোয় গমন করেন। এ সিঁড়িটি কী এবং কেমন ছিল, তার প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ তাআলাই জানেন। প্রতিটি আকাশে সেখানকার ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান এবং প্রত্যেক আকাশে অবস্থানরত পয়গম্বরদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।

প্রথম আকাশে হজরত আদম (আ.)-কে, দ্বিতীয় আকাশে হজরত ইয়াহিয়া ও ঈসা (আ.)-কে, তৃতীয় আকাশে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে, চতুর্থ আকাশে হজরত ইদরিস (আ.)-কে, পঞ্চম আকাশে হজরত হারুন (আ.)-কে, ষষ্ঠ আকাশে হজরত মুসা (আ.)-কে এবং সপ্তম আকাশে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে দেখতে পান। তিনি সাহাবায়ে কেরামের কাছে হজরত ঈসা ও মুসা (আ.)-এর আকৃতিও বর্ণনা করেছেন। নবীদের স্থানগুলো অতিক্রম করে এক ময়দানে পৌঁছেন। যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তারপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহা গমন করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছে। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রাখছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখানে হজরত জিবরাইল (আ.)-কে তাঁর স্বরূপে দেখেন। তাঁর ছয় শ পাখা। সেখানে তিনি একটি দিগন্তবেষ্টিত সবুজ রঙের ‘রফরফ’ দেখতে পান। রফরফ হলো সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পালকি। রফরফের মাধ্যমে তিনি স্বীয় রবের কাছে গমন করেন।

এ সফরে তাঁকে কয়েকটি জিনিস দেখানো হয়। তাঁকে দুধ ও মদ দেওয়া হয়েছিল। তিনি দুধ গ্রহণ করেন। এটা দেখে হজরত জিবরাইল (আ.) বলেন, আপনি স্বভাবগত বস্তু গ্রহণ করেছেন। আপনি মদ গ্রহণ করলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়। জাহান্নামিদের শাস্তিও তিনি অবলোকন করেন। জাহান্নামের দারোগা মালেককে দেখেছেন, তিনি হাসেন না। তাঁর চেহারায় হাসির কোনো চাপও নেই।