পাকিস্তানের লাহোর থেকে সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে ওমরা পালন করবেন ২৫ বাইকার। দীর্ঘ এই পথ তারা পাড়ি দেবেন বাইকে চড়ে। ইতোমধ্যে বাইকারদের এই দলটি আড়াই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে আরব আমিরাতের শারজাতে পৌঁছেছেন। এতে তাদের ১৫ দিন সময় লেগেছে। পুরো যাত্রায় তাদের ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আরব নিউজ ও খালিজ টাইমস।

খবরে জানানো হয়, পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একত্রিত হয়ে লাহোর থেকে এই ২৫ বাইকার যাত্রা শুরু করেছেন। এরপর বালুচিস্তানের তাফতান বর্ডার ক্রসিং করে ইরানে প্রবেশ করেন তারা। ইরানের বন্দর আব্বাস এলাকা থেকে ফেরিতে করে শারজায় পৌঁছেন।

মুকারাম তারিন নামে বাইকার দলের একজন খালিজ টাইমসকে জানান, ‘এই জায়গাটি (শারজাহ) অনেক সুন্দর। আমি প্রথমবার এখানে এসেছি। আমি এখানে অনেকদিন থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের ওমরা যাত্রার জন্য এখানে বেশিদিন অবস্থান করা যাবে না’।

তিনি বলেন, ‘শারজার অধিবাসীরা আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর তারা আমাদের ফল, চা ও বিভিন্ন নাস্তা দিয়েছে। অনেকেই আবার আমাদের দুপুর-রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে’। 

তুরিন জানিয়েছেন, ‘শারজাতে চারদিন অবস্থানের পর আমরা দুবাই ও আবুধাবি পেরিয়ে সৌদি সীমান্তে পৌঁছাব। সেখান থেকে রিয়াদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব’।

খালিজ টাইমস জানায়, বাইকারের এই দলটি ২০১৯ সালে এই ওমরা যাত্রার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে পৃথিবীব্যাপী সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে তাদের সফর সম্ভব হয়নি। 

এরপর সব স্বাভাবিক হলে তুরিন যখন সবাইকে যাত্রার বিষয়ে অবগত করে তখন সবাই আবার নতুন করে প্রস্তুত হয়। বাইকে চড়ে ওমরা যাত্রায় সড়কের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য এই দলটি ছয় মাস ধরে শারীরিক, মানসিকভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। 

তুরিন খালিজ টাইমসকে জানান, ‘ আমরা ছয় মাস আগে ওমরা যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করি। এই যাত্রার জন্য আমাদের যেসব দেশ পাড়ি দিতে হবে আমরা সে দেশের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং সব কাগজপত্র রেডি করি। এরপর আমরা যাত্রাপথের ম্যাপ তৈরি করি‘।

তুরিন বলেন, আমরা প্রতিদিন ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইক চালাতাম এবং সূর্য ডোবার আগেই গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতাম। 

তিনি আরও জানান, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে কাফেলা মক্কায় পৌঁছে ওমরা পালন করবে। এটিই আমাদের সব থেকে দীর্ঘ সফর। এই সফরের মাধ্যমে আমরা এই ছয় দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো করতে চাই। এই সফরে আমরা সামাজিক মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তুলছি।

আরব আমিরাত পর্যন্ত পৌঁছাতে এই বাইকারদের বালু ঝড়, মরুঝড়সহ বিভিন্ন বিপদ ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। 

যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তুরিন জানান, আমরা পাকিস্তানের একটি মরুভূমিতে প্রচণ্ড বালি ঝড়ের মুখোমুখি হই। এর মাত্র ১০ মিটার পেরোতেই আবার বরফ বৃষ্টির কবলে পড়ি। এরপর ইরানে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ি। এতে বাইক চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।

এই কাফেলাটি পাকিস্তান, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত,জর্দান, ইরাকসহ ছয়টি দেশে যাত্রা বিরতি দিবে। ইরান হয়ে পাকিস্তান ফেরার আগে ৬০ দিনে মোট ১৪ হাজার পথ পাড়ি দেবে বাইকারের দলটি।

সূত্র : আরব নিউজ, খালিজ টাইমস, এক্সপ্রেস নিউজ

এনটি