প্রতীকী ছবি

শাবান মাস এলে মুসলমানদের মধ্যে খুশি-আনন্দ ও সংবেদন-চৈতন্যের আভা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বছরের শ্রেষ্ঠ মাস পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যায়। আহ্লাদের ভিন্ন রকম হিল্লোল দেখা দেয় সবার কাজে-কর্মে ও আচরণ-উচ্চারণে। 

এই মাস আনন্দ ও প্রত্যাশার পারদে উচ্ছ্বাসপূর্ণ। মুসলমানরা এই মাসে রমজানের জন্য আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি শুরু করে। তারা পরিকল্পনা করে; লক্ষ্য স্থির করে এবং উদ্দেশ্য পানে এগিয়ে চলে।

স্বয়ং শাবান মাস সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যবহ। এ মাস থেকে রাসুল (সা.) রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। পাশাপাশি রমজানের আগমনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতেন। অন্যদের প্রতিও শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাবে গুরুত্বারোপ করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

অধিক হারে নফল রোজা
এ মাসে আল্লাহর রাসুল (সা.) অধিক হারে নফল রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৭)

আনাস (রা.) বর্ণনা করেন— 

একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রমজানের পরে কোন মাসের রোজা সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ? উত্তরে তিনি বলেন, শাবানের রোজা— রমজানের সম্মানার্থে।

(তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৩)

অন্য এক হাদিসে উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি মুহাম্মদ (সা.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া কখনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৩৬)

মধ্য শাবানে রোজা
শাবান মাসজুড়ে রোজা রাখা ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে বহু ধরনের সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া ‘আইয়ামে বিজ’র রোজাও গুরুত্বপূর্ণ। (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজাকে আইয়ামে বিজ’র রোজা বলে। এই রোজার রাখার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।)

পাশাপাশি দুর্বল সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে ১৫ তারিখে বিশেষভাবে রোজা রাখার কথা পাওয়া যায়। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত সেই হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৪)

ফজিলতপূর্ণ শবে বরাত
মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত রয়েছে। কোরআনের ভাষায় এটাকে লাইলাতুম মুবারকা বলে। আমাদের দেশীয় পরিভাষায় ‘শবে বরাত’ বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন হাদিসে এ রাতের ফজিলতের আলোচনা এসেছে।

মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন— 

আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫)

শবে বরাতে কি নির্দিষ্ট আমল আছে?
শবে বরাত ও শবে কদরের বিশেষ কোনো আমল নেই। বিশুদ্ধ মতানুসারে এই দুই রাতে একাকী আমল করার কথা রয়েছে। তবে স্বাভাবিক নিয়মে ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে পড়তে হবে। এবং জামাতের সঙ্গে আদায় করা জরুরি। তাছাড়া কোনো নফল ইবাদত-বন্দেগি করতে ইচ্ছে হলে— নিজ নিজ ঘরে একাকী করবে।

বিভিন্ন বর্ণনায় এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, দীর্ঘ সিজদা করা এবং দোয়া-ইস্তেগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুআবুল ইমান, বায়হাকি : ৩/৩৮২, ৩৮৩)

যেসব কাজ বর্জনীয়
এসব নফল আমলের জন্য মসজিদে সমবেত হতে হয় না। দলে দলে কোথাও একত্রিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। এই রাতে এভাবে আমলের কথা হাদিসের কোথাও উল্লেখ নেই। সাহাবায়ে কেরামের সময়কালেও এমন রেওয়াজ ছিল না। অবশ্য, কোনো ধরনের আহ্বান ও কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়া কেউ মসজিদে একত্রিত হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। তখন তারা একাকী ও আলাদাভাবে ইবাদত করবে।

প্রসঙ্গত, এক শ্রেণির যুবক এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। উচ্চস্বরে জিকির ও শব্দ করে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো আবিশ্যকভাবে বর্জনীয়। কারণ অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল ইবাদত করার কোনো বিধান শরিয়তে নেই।