প্রতীকী ছবি

রমজানে মুমিনের জন্য একটি বিশেষ এই নামাজের নাম ‘তারাবি’। তারাবি আরবি শব্দ ‘তারবিহাতুন’-এর বহুবচন। এর অর্থ হলো- আরাম করা ও বিশ্রাম করা।

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, তারাবির নামাজে প্রতি চার রাকাত পর পর কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই এ নামাজকে তারাবির বা প্রশান্তির নামাজ বলা হয়।

পবিত্র রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল এই তারাবির নামাজ। এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আল্লাহর রাসুল (সা.) তিন দিন এই নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছেন। তিনি নিয়মিত সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করলে, তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই পুরো রমজানে তিনি জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেননি।

নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.)-এর যুগে। সাহাবায়ে কিরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত হয়। তখন আর এটি ফরজ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কেননা মহানবী (সা.)-এর ওফাতের মাধ্যমে ওহির পথ বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলাদেশে তারাবি নামাজে সাধারণত কোরআন শরীফ খতম করার নিয়ম রয়েছে। প্রায় সব মসজিদে কোরআনের হাফেজরা তারাবি নামাজে ইমামতি করে থাকেন। তারা প্রত্যেকদিন নামাজে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করেন। তারাবির ইমামরা সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকেন, তবে অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরাও কোরআন হেফজ করেন, তাই কেউ কেউ জানতে চান তারাবিতে নাবালক শিশুদের ইমামতি জায়েজ হবে কিনা! যেমন, একজন জানতে চেয়েছেন,

‘নাবালেগ বাচ্চার পেছনে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ত করলে কি তা সহীহ হবে? অনেক হেফজ খানায় দেখা যায়, রমজান মাসে ছাত্ররা কয়েকজন করে ভাগ ভাগ হয়ে তারাবির নামাজ পড়ে। এক্ষেত্রে যেহেতু মূল উদ্দেশ্য থাকে নামাজে কোরআন পড়ার মাধ্যমে হেফয পাকা করা, তাই নাবালেগ ছাত্ররাও নামাজ পড়ায় এবং বড় ছাত্ররা তাদের পেছনে এক্তেদা করে। অনেক সময় নেগরানি করার জন্য উস্তাজও ছাত্রদের সাথে নামাজ পড়েন। আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান কী?

এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, নাবালক বাচ্চার পেছনে প্রাপ্তবয়স্কদের এক্তেদা সহীহ নয়। বিশুদ্ধমতে উক্ত বিধানটি ফরজ-নফল সব ধরনের নামাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ছাত্র বা উস্তাজের জন্য নাবালেগ ছাত্রের পেছনে তারাবির নামাজে এক্তেদা করা জায়েজ হবে না। 

হযরত আতা ও উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. থেকে বর্ণিত, তারা বলেন-

لاَ يَؤُمُّ الْغُلاَمُ قَبْلَ أَنْ يَحْتَلِمَ فِي الْفَرِيضَةِ وَلاَ غَيْرِهَا

নাবালক বাচ্চা ফরজ-নফল কোনো নামাজেই ইমামতি করবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৩৫২৪) তবে এক্ষেত্রে ছোট ছাত্র ও বড় ছাত্ররা আলাদা আলাদা জামাত করতে পারে। তাহলে তাতে মাসআলাগত সমস্যা থাকবে না। -(আলইখতিয়ার ১/২০২; ফাতহুল কাদীর ১/৩১০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৭৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৬)

এনটি