প্রতীকী ছবি

নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর মাঝে যেমন উত্তম গুণাবলির সর্বাধিক সমাবেশ ঘটেছিল, তেমনি তার দৈহিক সৌন্দর্যও ছিল অতুলনীয়। তার আকার-আকৃতি অনেক সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৈহিক আকৃতি

হজরত আনাস ইবনি মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দীর্ঘ ছিলেন না আবার খাটোও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা কিংবা বাদামী বর্ণেরও ছিলেন না। তার চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একদম সোজাও ছিল না। ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তায়ালা তাকে নবুওয়াত দান করেন। এরপর মক্কায় ১০ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর কাটান। আল্লাহ তায়ালা ৬০ বছর বয়সে তাকে ওফাত দান করেন। ওফাতকালে তার মাথা ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা ছিল না।

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেমানান দীর্ঘকায় ছিলেন না। আবার অতি খাটোও ছিলেন না। বরং মাঝারি গড়নের চেয়ে একটু দীর্ঘ ছিলেন। -(সহিহ বোখারী, ৫৯০০; সহিহ মুসলিম, ৬২৩৫; মুয়াত্তা মালেক, ১৬৩৯, ইবনি মাজাহ)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাঁধ ও চুল

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি সম্পর্কে আরেক হাদিসে হজরত বারা ইবনি আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমাকৃতির ছিলেন। তার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী অংশ ছিল তুলনামূলক প্রশস্ত। তার ঘন চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তার দেহে লাল লুঙ্গি ও লাল চাদর শোভা পেত। আমি তার তুলনায় সুদর্শন কাউকে কখনো দেখিনি। (সহিহ বোখারী,৩৫৫১, মুসলিম, ২১০; নাসাঈ, ৫২৩২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত-পা

হজরত আলী ইবনি আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি দীর্ঘ কিংবা বেশি খাটো ছিলেন না। তার হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু এবং আঙ্গুলসমূহ ছিল মাংসল। তার মাথা ছিল কিছুটা বড় এবং হাত-পায়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। বুক হতে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল। যখন পথ চলতেন মনে হতো যেন কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। (মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস, ৭৪৬; মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস, ৪১৯৪; সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস, ৬৩১১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ

জাবির ইবনি সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ প্রশস্ত ছিল। চোখের শুভ্রতার মাঝে কিছুটা লালিমা ছিল। পায়ের গোড়ালি স্বল্প মাংসল ছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৬২১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২১০২৪, সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস, ৬২৮৯)

পূর্ণিমা চাঁদের থেকেও সুন্দর

জাবির ইবনি সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ আলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম। তখন আমি একবার তার দিকে ও একবার চাঁদের দিকে তাকাতে থাকলাম। মনে হলো তিনি আমার কাছে পূর্ণিমার চাঁদের থেকে অধিকতর চমৎকার।  (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস, ৭৩৮৩; মারেফাতুস সাহাবা, হাদিস, ১৪৩৫; মিশকাত, হাদিস, ৫৭৯৪)

হজরত ইবরাহিম আ,-এর মতো দেখতে

জাবির ইবনি আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার কাছে নবীগণকে পেশ করা হয়। মূসা আ.- এর মধ্যে বিভিন্ন লোকের সাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল। তিনি যেন শানুয়াহ গোত্রের লোক। আমি ঈসা ইবনি মারইয়াম আ.-কে উরওয়া ইবনি মাসউদের সাদৃশ্যপূর্ণ দেখিতে পাই। তারপর আমি ইবরাহীম আ.-কে দেখিতে পাই এবং তাকে পাই তোমাদের সঙ্গীর সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তোমাদের সঙ্গী বলে তিনি নিজেকে বুঝিয়েছেন। আর আমি জিবরাঈল আ.-কে দিহইয়া কালবী-এর সাথে সদৃশ্যপূর্ণ দেখিতে পাই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৪৪১; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ১৪৬২৯; সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস, ৬২৩২)

এনটি