‘বাবা হুজুর’ খ্যাত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা মুমতাজুল করিম ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি দীর্ঘ ৩৯ বছর (১৯৮৪-২০২৩) প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছেন।

ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাবা হুজুরের জামাতা মাওলানা আব্দুল হাই। সোমবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১.২০ মিনিটে রাজধানীর সায়েদাবাদের আল কারিম হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। মঙ্গলবার বাদ আসর হাটহাজারী মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এবং মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মাওলানা মুমতাজুল কারিম ১৯৪২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার ডুলিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 

তিনি এলাকার বিখ্যাত বটগ্রাম হামিদিয়া মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর ফেনী শর্শদি মাদরাসায় কিছুদিন পড়াশোনা করে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। পরে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসা থেকে সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। 

দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানে যান। পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদরাসা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে তাফসির ও আদব (আরবি সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে ময়মনসিংহের কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন।  ওই বছরই (১৯৬৫) বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন এবং মুসলিম শরিফের দরস দেওয়া শুরু করেন। 

পরবর্তীতে ঢাকা আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসায় সাত বছর মুহাদ্দিস হিসেবে খেদমত করে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পান। পটিয়া মাদরাসায় তিনি টানা সাত বছর সুনামের সঙ্গে হাদিসের দরস দেন। এ সময় পটিয়া থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক আত তাওহীদ’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জামিয়া হোসাইনিয়ার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

১৯৮৪ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে নিয়োগ পান। হাটহাজারী মাদরাসায় অত্যন্ত সুনাম-সুখ্যাতির সঙ্গে হাদিসের দরস দেন। 

হাটহাজারী মাদরাসায় অধ্যাপনাকালে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার অপরিসীম দরদ ও ভালোবাসার কারণে ছাত্ররা তাকে ‘বাবা হুজুর’ বলে সম্বোধন করতেন।

ওএফ