প্রতীকী ছবি

নবীজির চার মেয়ের সর্ব কনিষ্ঠ হজরত ফাতিমা জাহরা (রা.)। তিনি নবীজির নবুওতপ্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। ওই বছরই কোরাইশ গোত্র কাবার পুননির্মাণ করেছিল। প্রিয়নবীর বয়স তখন ৩৫ বছর। আরেক বর্ণনামতে নবুওতপ্রাপ্তির এক বছর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তখন নবীজির বয়স ছিল ৪১ বছর।

নবীজির আদরের দুলালি

ফাতিমা জাহরা (রা.) ছিলেন রাসুলের সর্বাধিক স্নেহের ও আদরের দুলালি। যখনই রাসুলের কাছে যেতেন রাসুল তাকে অভ্যর্থনা জানাতেন। মাথায় চুমো দিতেন। সম্মানার্থে পাশে বসাতেন।

মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘ফাতিমা (রা.) আমার অংশ। যে তাকে রাগান্বিত করল, সে আমাকে রাগান্বিত করল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭১৪) তাই তো ফাতিমা যা অপছন্দ করতেন নবীজিও তা অপছন্দ করতেন।

নবীজির প্রতি ফাতিমা রা.-এর ভালোবাসা

ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কার কাফের-মুশরিকদের অমানবিক নির্যাতনের দিনগুলোতে তিনি নবীজির পাশে ছিলেন। আল্লাহর রাসুলের কষ্ট দূর করার চেষ্টা করতেন। 

একবার নামাজরত অবস্থায় আবু জেহেল মহানবীর কাঁধে কিছু নাড়িভূঁড়ি রেখে দিয়েছিল। ফাতিমা সেটা দেখে তা সরানোর জন্য দৌঁড়ে গেলেন। বাবার কষ্টে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। 

তিনি সব সময় বাবাকে বলতেন, হে আব্বু, আমি আপনাকে সাহায্য করব। অথচ তখন তিনি ছিলেন অল্প বয়েসী কিশোরী। সেটা করতে তিনি সক্ষম হওয়ার কথা না। এটা তিনি করতেন মূলত বাবার কষ্ট লাঘব করার জন্য এবং তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। (মুকতাতিফাত মিনাস সিরাহ, পৃষ্ঠা : ১৪)

ফাতিমা রা.-এর বিয়ে

দ্বিতীয় হিজরিতে বদর যুদ্ধের পর আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতিমা রা.-এর বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের সময় যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছিলো তাকে ইসলামের ইতিহাসে মোহরে ফাতেমি বলা হয়। অনেক মুসলিম পরিবারে মেয়েদের বিয়ের সময় এই মোহরানা ধার্য করার প্রচলন রয়েছে।

ফাতিমা রা.-কে নবী বংশের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। তার দুই ছেলে হাসান ও হুসাইন রা. থেকে নবীজির বংশধারা চলমান। হাসান ও হুসাইন রা. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যধিক প্রিয় ছিলেন।

জান্নাতি নারীদের সরদার ফাতিমা রা. 

হাদিসের ভাষায় ফাতিমা রা. জান্নাতি নারীদের সরদার। নবী (সা.) বলেন, ‘ফাতিমা জান্নাতের নারীদের সরদার এবং হাসান-হোসাইন জান্নাতের যুবকদের সরদার।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৮১) তিনি মোট ১৮টি হাদিস বর্ণনা করেন।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী ফাতিমা রা. 

এছাড়াও নবীজি তাকে পৃথিবীর সকল নারীদের শ্রেষ্ঠ গণ্য করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, জগতের সব নারী থেকে চারজন নারী অনুকরণের জন্য যথেষ্ট- মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭৮)

জীবদ্দশাতেই আপনজনদের হারানোর শোক

হিজরতের আগে ছোট বয়সেই মা খাদিজা রা. কে হারান ফাতিমা রা.। জীবদ্দশাতেই বোন রুকাইয়্যা, উম্মে কুলসুম তারপর জয়নবকে হারান। এরপর জীবদ্দশাতেই তিনি বাবা মুহাম্মদকেও (সা.) -কে হারান।

নবীজিকে দাফন করে এলে ফাতিমা (রা.) সাহাবি আনাসকে (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে তোমাদের জন্য সম্ভব হলো- আল্লাহর রাসুলের ওপর মাটি চাপা দিতে!’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪৬২)

ফাতিমা রা. এর ইন্তেকাল

নবীজি ইন্তেকালের পর তিনি মাত্র ৬ মাস জীবিত ছিলেন। নবীজির শোকে এ সময় তিনি অনেক ভেঙে পড়েন। পিতৃবিয়োগে এতই কাতর হয়ে পড়েন যে, মৃত্যু পর্র্যন্ত ৬ মাস তাকে হাসতে দেখা যায়নি।

ইতিহাসবিদ আল-ওয়াকিদির মতে, হজরত ফাতিমা (রা.) ১১ হিজরির ৩ রমজান ইন্তেকাল করেন। হজরত আব্বাস (রা.) তাঁর জানাজার নামাজে ইমামতি করেন। চাচা আকিলের বাড়ির এক কোণে তাঁকে সমাহিত করা হয়। (আস-সাহাবিয়াত: ১৫৩)

এনটি