রমজান নেক আমলের বসন্তের মাস। রমজানুল মুবারকের পুরো এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পয়লা শাওয়াল তথা ঈদুল ফিতর। ঈদ মুসলমানদের জন্য আনন্দ-উৎসব ও ক্ষমাপ্রাপ্তির দিন। এ আনন্দ আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তির। মাগফিরাত প্রত্যাশার। আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হওয়ার। 

ঈদের সূচনা ও তাৎপর্য 

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা এবং আমাদের নবী (সা.) ঈদকে মুসলমানদের জন্য আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই স্বীকৃতির কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন মদীনাবাসীকে বছরে দুইদিন উৎসব করতে দেখেন। রাসূল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এই দুইদিন উৎসব করো কেন? তারা বলল, জাহেলী যুগে এ দুইদিন আমরা আনন্দ উৎসব করতাম। রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এ দুইদিনের বদলে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ : ১১৩৪)। 

এই হাদিস থেকে একথা বুঝা যায়, অমুসলিমদের উৎসব আনন্দ বর্জন করার জন্যই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুটি ঈদ দান করেছেন। সুতরাং আমরা অমুসলিমদের উৎসব-পর্বণ বর্জন করবো এবং আমাদের ঈদ উদযাপন করবো। অমুসলিমদের মতো আমাদের ঈদ যেন কেবলমাত্র আমোদ-প্রমোদের দিন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখবো। কেননা আমাদের ঈদ তাদের উৎসবের মতো নয়। এই ঈদ আল্লাহর দেওয়া অনন্য তোহফা, তাই এর উদযাপনও হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক এবং শরীয়তের হুকুম অনুসারে।

মুসলমানদের ঈদ প্রসঙ্গে হাসান বসরী রহ. বলেন, ঈদুল ফিতর হলো ঈদের নামাজ পড়া ও সদকাতুল ফিতর আদায় করা এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঈদের নামাজ পড়া ও কুরবানি করা। (ফাযাইলুল আওকাত : বায়হাকী, পৃষ্ঠা ৩০৩-৩০৪)।

ঈদের রাতের আমল

ঈদের রাত আমাদের জন্য উৎসব ও দুনিয়াবী নানান কাজে লিপ্ত থাকার রাত হলেও সালাফ তথা পূর্বসূরিদের নিকট ঈদের রাত ছিলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাত। ক্ষমা ও পুরস্কার লাভের জন্য রোজাসহ আল্লাহর হুকুম আহকাম ঠিকমতো আদায় করতে পেরেছেন কি না, তা কবুল হয়েছে কিনা, সেজন্য তারা এ রাতে তটস্থ থাকতেন। বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়তেন। কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করতেন। দোয়ায় মশগুল থাকতেন।

হাদিসে এসেছে, হযরত আবূ উমামা (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন- যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার রাতে (সাওয়াবের নিয়তে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে) জাগ্রত থাকবে, সে ব্যক্তির হৃদয় ঐ দিন মৃত্যুবরণ করবে না যেদিন অন্য হৃদয়গুলো মৃত্যুবরণ করবে। (অর্থাৎ কিয়ামতের দিবসে তার কোন ভয় থাকবে না)। (ইবনে মাজাহ : ১৭৮২)। 

লেখক : শিক্ষক, মাশিকাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, দেবিদ্বার, কুমিল্লা