প্রতীকী ছবি

কিশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের পর চাচা আবু তালিবের পরামর্শে মক্কার ধনবতী নারী খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায় নিযুক্ত হন মুহাম্মদ (সা.)। ব্যবসায় নিযুক্ত হয়ে তিনি খাদিজার প্রতিনিধি হয়ে সিরিয়া গমন করেন। এই সফরে নবীজির সঙ্গী ছিলেন খাদিজার ক্রীতদাস মাইসারা। 

যাত্রাপথে মাইসারা অবাক চোখে খেয়াল করেন, চলার পথে চলমান মেঘমালা মহানবী (সা.)-কে ছায়া প্রদান করছে। সিরিয়া পৌঁছানোর পর একজন খ্রিস্টান পাদরি মহানবী (সা.)-কে দেখে নবী হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এছাড়াও বাণিজ্যিক সফরে মহানবী (সা.) দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করেন।

সফর থেকে ফেরার পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সততা, বিচক্ষণতা ও মাইসারার বর্ণনা শুনে খাদিজা (রা.) তাঁকে বিয়ের করার মনস্থ করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ৪৬)

খাদিজা (রা.) অভিভাবকতুল্য চাচাতো ভাই ওরাকা ইবনে নওফেলের সঙ্গে পরামর্শ এবং বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনাব্বিহের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা উভয়ে তাকে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন। নাফিসা মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব দিলে তিনি সম্মত হন এবং চাচাদের তা অবগত করেন। রাসুল (সা.)-এর চাচা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব খাদিজা (রা.)-এর পরিবারের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যান। উভয় পরিবারের সম্মমিতে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। 

বিশুদ্ধ মতে বিয়ের সময় মহানবী (সা.)-এর বয়স ২৫ বছর এবং খাদিজা (রা.)-এর বয়স ৪০ বছর ছিল। বাণিজ্যিক সফর থেকে ফেরার দুই মাস পর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মহানবী (সা.) খাদিজা (রা.)-কে মহর হিসেবে ২০টি উট প্রদান করেন। যার তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল পাঁচ শ দিরহাম। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৭৭; সিরাতে মোস্তফা : ১/১০৮)

নবীজি (সা.)-এর বিয়ের সময় বনু হাশিম ও বনু মুদারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আবু তালিব বিয়ের খুতবা পাঠ করেন।

তাতে তিনি বলেন, ‘ইনি হচ্ছেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। যিনি ধন-সম্পদের দিক থেকে কম হলেও তাঁর মহান চরিত্র আর অনুপম গুণাবলির কারণে যাকেই তাঁর মোকাবেলায় রাখা হবে তিনি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন হবেন। কেননা ধন-সম্পদ বিলীয়মান ছায়া ও প্রত্যাবর্তনশীল বস্তুবিশেষ। আর এই মুহাম্মদ যার আত্মীয়তার সম্পর্কের খবর আপনাদের সবারই জানা। তিনি খাদিজা বিনতে খোয়াইলিদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে আগ্রহী। তাঁর সমুদয় মহর তা নগদ হোক বা বাকি আমার সম্পদ হতে দেওয়া হবে। আল্লাহর শপথ! তিনি বিপুলভাবে সম্মানিত ও নন্দিত হবেন।’ (সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ২৪)

মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে খাদিজা (রা.)-এর দাম্পত্যকাল ছিল ২৪ বছর। নারীদের মধ্যে সবার আগে ঈমান গ্রহণ করেন খাদিজা (রা.)। নবুয়তের প্রাথমিক বছরগুলোতে কঠিন সময়ে তিনি মহানবী (সা.)-এর সেবায় তাঁর সর্বস্ব উজাড় করে দেন। হিজরতের তিন বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর জীবদ্দশায় রাসুলুল্লাহ (সা.) আর কোনো বিয়ে করেননি। পুত্র ইবরাহিম ছাড়া মহানবী (সা.)-এর সব সন্তান খাদিজা (রা.)-এর গর্ভজাত। (সিরাতে মোস্তফা : ১০৮; সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ২৬)

রাসুলের হাদিসে বর্ণিত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন হজরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা.। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, জগতের সব নারী থেকে চারজন নারী অনুকরণের জন্য যথেষ্ট- মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭৮)