প্রতীকী ছবি

সুরা মাউন কোরআনের ৩০ তম পারার ১০৭ নম্বর সুরা। এর আয়াত সংখ্যা সাত। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরায় দুই শ্রেণীর মানুষের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

সুরা মাউনে যে আলোচনা

প্রথম শ্রেণী হলো- যারা ধর্মহীন পরকালকে অস্বীকার করে। তাদের অন্যতম খারাপ অভ্যাস হলো, তারা এতিমের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে। এতিম-অসহায়দের সহযোগিতা নিজেরাও করে না, অপরদেরকেও এদিকে উৎসাহিত করে না।

অপর শ্রেণী হলো- মুনাফিক যারা নিজেদের নামাজে অবহেলা করে, সময়মতো নামাজ আদায় করে না। তারা লোক-দেখানোর জন্য আমল করে। এই দুই প্রকার লোকের জন্য এই সূরায় ধ্বংসের ঘোষণা করা হয়েছে।

সুরা মাউনের শানে নুযুল

এই সুরার শানে নুযুল সম্পর্কে ইবনে জুরাইয থেকে বর্ণিত, আবু সুফিয়ান প্রতি সপ্তাহে একটি উট জবাই করত। একদিন এক এতিম শিশু তার কাছে গোশত চাইলে সে ওই শিশুকে লাঠি দিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে। এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তায়ালা সূরা মাউন অবতীর্ণ করেন। মতান্তরে আস বিন ওয়াইল, ওয়ালিদ বিন মুগিরা অথবা আবু জাহেলের এমন নির্মম অপকর্মের প্রেক্ষাপটে এ সূরা অবতীর্ণ হয়।

সুরা মাউনে নামাজে অমনোযোগীদের সম্পর্কে আলোচনা

 এই সুরার তিন থেকে ছয় নম্বর আয়াতে নামাজে অমনোযোগীদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘অতএব দুর্ভোগ সে সব নামায আদায়কারীর জন্য, যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (সুরা মাউন, আয়াত, ০৪-০৬)

এই সুরার পাঁচ নম্বর আয়াতে নামাজে অমনোযোগী বা উদাসীন বলে কয়েক শ্রেণীর মানুষকে বুঝানো হয়েছে। এই মানুষগুলো হলো - যারা মোটেই নামাজ পড়ে না অথবা প্রথম দিকে পড়ত কিন্তু পরে তাদের মধ্যে অলসতা এসে পড়েছে অথবা নামাজ যথাসময়ে আদায় করে না; বরং যখন মন চায় তখন পড়ে নেয় অথবা দেরি করে আদায় করতে অভ্যস্ত অথবা বিনয়-নম্রতার (ও একাগ্রতার) সাথে নামাজ পড়ে না- এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে।

মুফাসিসরদের মতে, নামাজে এই ধরনের ত্রুটি ওই অর্থের অন্তর্ভুক্ত। অতএব নামাজের ব্যাপারে এই বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা প্রয়োজন। আয়াতের মাধ্যমে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এমন লোকেরাই এই বদ অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে পারে, যারা আখেরাতের হিসাব ও প্রতিদানের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে না। এ জন্যই মুনাফিকদের একটি গুণ এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘যখন তারা (মুনাফিকরা) নামাজে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে, কেবল লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে।’(সূরা নিসা ১৪২ আয়াত)

এ সুরার ছয় নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের একটি অবস্থার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা লোক দেখানোর জন্য এবং মুসলিম হওয়ার দাবী প্রমাণ করার জন্য নামাজ পড়ে। কিন্তু নামাজ যে ফরজ, এ বিষয়ে তারা বিশ্বাসী নয়। এ কারণে সময়ের প্রতিও লক্ষ্য রাখে না এবং ঠিক মতো আয়াতের প্রতি খেয়াল রাখে না। লোক দেখানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে নামাজ পড়ে অন্যথায় নামাজ ছেড়ে দেয়। আর কোনও সময় নামাজ আদায় করলেও এর ওয়াজিবসমূহ, শর্ত ইত্যাদি পূর্ণ করে না। (তাফসীরে আহসানুল বায়ান)