ছবি : গেটি ইমেজ

গ্রীস্মকালে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বাহারি ফলমূলে ভরে উঠে চারপাশ। শরীরে ভিটামিট বাড়াতে সহায়তার পাশাপাশি দেহমনে প্রশান্তি আনে ফলমূল। পবিত্র কোরআনে ফলমূলকে জান্নাতি খাবার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাদের দেব ফলমূল এবং মাংস, যা তারা চাইবে। (সুরা : তুর, আয়াত : ২১) আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে আছে ফলফলাদি, খেজুর ও আনার।’ -(সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৬৮)

বর্তমানে মৌসুমী ফলে ফরামালিন মেশানোর মতো গর্হিত কাজ করতে দেখা যায় অনেককে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা বলে জানানো হয় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।

এ ছাড়া ফরমালিন খাদ্য পরিপাকে বাধা দেয়, পাকস্থলীর ক্ষতি করে, যকৃতের অ্যানজাইম নষ্ট করে এবং কিডনির কোষ ধ্বংস করে। ফলে গ্যাস্ট্রিক-আলসার বাড়ে, লিভার ও কিডনির নানা রকম জটিল রোগ দেখা দেয়।

অন্যদিকে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণার শামিল। যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমন গর্হিত কাজে জড়িতদের জন্য কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বাজারে খাদ্যস্তূপের ভেতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন, ভেতরেরগুলো ভেজা। তিনি খাদ্যে বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, এমনটা করা হলো কেন? বিক্রেতা বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে, হে আল্লাহর রাসুল! নবী করিম (সা.) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যেগুলো ওপরে রাখনি কেন, যাতে মানুষ দেখতে পেত? লোকটি চুপ করে রইল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ (সহিহ মুসলিম : ১০২)

ফরমালিন মিশ্রিত ফল খাওয়ার কারণে কেউ মারা গেলেও সেই দায় প্রতারক ব্যবসায়ীর। ইসলামে এই হত্যাকাণ্ডের পরকালীন শাস্তি জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম। যাতে সে দীর্ঘকাল থাকবে, তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত। আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)

যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় এবং খাদ্যের গুণাগুণ নষ্ট করে তারা নামে মুসলমান হলেও তাদের কোনো ইবাদত কবুল হবে না। কারণ তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। আর রুজি-রুটি হালাল হওয়া ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। 

হাদিসে বলা হয়েছে, হারাম খাদ্যের মাধ্যমে যে রক্ত-মাংস তৈরি হবে, ওই রক্ত-মাংসের শরীরের মাধ্যমে কৃত কোনো ইবাদত কবুল করা হবে না। যেসব ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল দেয়, ভেজাল মেশায়, ভেজালে সমর্থন দেয়, ভেজাল থেকে উপকৃত হয় তাদের সম্পর্কে নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের মহাপাপীরূপে ওঠানো হবে, তবে যারা সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছে তারা ছাড়া।’ (তিরমিজি: ১২১০)