প্রতীকী ছবি

মানুষের চলাফেরার রাস্তাঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। এক হাদিসে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। তিনি, পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখ।’ (তিরমিজি)।

হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন, ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা। আর সর্বনিম্ন শাখা হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। (সুনানে তিরমিজি-২৬১৪)

আবু হুরাইরা (রা.) রাসূল (সা.) হতে আরও বর্ণনা করেছেন- তোমরা এমন দুটি কাজ হতে বিরত থাক যা অভিশপ্ত। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ! সেই অভিশপ্ত কাজ দুটি কী? জবাবে রাসুলুল্লাহ (রা.) বলেন: যে ব্যক্তি মানুষের যাতায়াতের পথে কিংবা ছায়াযুক্ত স্থানে (বৃক্ষর ছায়ায় যেখানে মানুষ বিশ্রাম গ্রহণ করে) পেশাব-পায়খানা করে। (সহিহ মুসলিম-২৬৯, হুনানের আবু দাউদ - ২৫)

হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তার ওপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। কেননা এটাই আমাদের ওঠা-বসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। নবী (সা.) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা।’ (বোখারি : ২৪৬৫)।

অন্যরেওয়ায়েতে আছে, হজরত রাসুল (সা.) সাহাবি হজরত আবু যর গিফারি (রা.)-কে নসিহত করেন, তার মাঝে একটি উপদেশ ছিল রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, হাড্ডি সরানোও সদকা। (জামে তিরমিজি : ১৯৫৬)। 

রাস্তা থেকে কাঁটাদার গাছ কাটার পুরস্কার বিষয়ে একাধিক হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতের গালিচায় গড়াগড়ি খেতে দেখলাম (অর্থাৎ শান্তি ও আরামের সঙ্গে সুখময় জীবন কাটাচ্ছে)। মানুষের চলাচলের পথে একটি গাছ ছিল, যার কারণে চলাচলে কষ্ট হচ্ছিল। এ ব্যক্তি তা কেটে দিয়েছিল। (ফলে আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে জান্নাতে দাখেল করেন)। (মুসলিম : ১৯১৪)।

শুধু তাই নয়, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কিছু সরানো পাপমুক্তিরও একটা মাধ্যম। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তায় চলতে চলতে একটি কাঁটার ডাল পেল, সে সেটিকে সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার এই কাজের কদর করলেন এবং তাকে পাপমুক্ত করে দিলেন।’ (বোখারি : ৬৫২; মুসলিম : ৫০৪৯)।

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা ঈমানের শাখা, পাপমোচনকারী, সৎকর্ম এবং সদকাও। একজন মুসলিমের জন্য সমাজের কল্যাণমূলক গুরুত্বপূর্ণ যতগুলো সৎকর্ম আছে তার মধ্যে রাস্তার আদবও একটা। নবী (সা.) বলেছেন, ‘একদা আমার কাছে উম্মতের ভালো ও মন্দ আমল পেশ করা হলো। তার ভালো আমলগুলোর অন্তর্ভুক্ত একটি আমল দেখলাম, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা...।’ (মুসলিম/১২৬১)।

একদা সাহাবি আবু বার্যাহ (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারব। তিনি বললেন, মুসলিমদের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করো।’ (মুসলিম : ৬৮৩৯)।

বুরাইদাহ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আরেকটি চমৎকার হাদিসে বলেন, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘মানবদেহে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে। প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওই প্রত্যেক গ্রন্থির তরফ থেকে দেয় সদকা রয়েছে।’ সবাই বলল, ‘এত সদকা দিতে আর কে সক্ষম হবে হে আল্লাহর রাসুল?’ তিনি বললেন, ‘মসজিদ থেকে কফ (ইত্যাদি নোংরা) দূর করা, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা-পাথর প্রভৃতি) দূর করা একটা সদকা। যদি তাতে সক্ষম না হও, তবে দুই রাকাত চাশতের নামাজ তোমার সে প্রয়োজন পূর্ণ করবে।’ (আহমাদ, আবু দাউদ : ৫২৪৫; ইবনে হিব্বান; তারগীব/৬৬১)।

রাস্তার হক নষ্ট কোনো সাধারণ বিষয় নয়। ইসলামে এটা খুব কঠোর একটা ব্যাপার। মু’আয বিন জাবাল (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, তোমরা তিনটি অভিশাপ আনয়নকারী কর্ম থেকে বাঁচো। আর তা হলো, ঘাটে, মাঝ রাস্তায় এবং ছায়ায় পায়খানা করা।’ (আবু দাউদ : ২৬; ইবনে মাজাহ : ৩২৮; তারগীব : ১৪১)।