প্রতীকী ছবি

ইসলাম সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করার জোর নির্দেশ দিয়েছে। সন্তান ছেলে হোক, মেয়ে হোক, ছোট বা বড় হোক সবাই সমান, তাই মা-বাবার আচার-আচরণ, স্নেহ-মমতা, দান-অনুদান, শাসন-অনুশাসন, এসব কিছুতেই সব সন্তানের প্রাপ্য সমান। এ বিষয়টির প্রতি মা-বাবার বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ সন্তান ছোট হলেও এ বিষয়গুলো সে খুব অনুভব করে। ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে বড় হবার পর মা-বাবার শেষ বয়সে সন্তান তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় না এবং ভাইবোনদের মধ্যে সম্পর্কও ভালো থাকে না। আর এ জন্য দায়ী থাকে মূলত অভিভাবকের অসম আচরণ। 

এজন্য ইসলাম সন্তানদের মাঝে সমতা ও ইনসাফের কথা বলেছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে নবী আপনি বলুন! আমার প্রভু আমাকে ন্যায়বিচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যখন বিচার করো! ন্যায়বিচার করো! তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি।’ (সূরা শুয়ারা-১৫)

সর্বদা মা-বাবাকে সন্তানের মধ্যে আচরণে সমতা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত আমের (রহ.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বশীরকে (রা.) মিম্বরের ওপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) সাক্ষী রাখা ব্যতীত আমি এতে সম্মত নই। তখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমি আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম দিয়েছ? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় করো এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। নুমান (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে এসে সেই দানটি ফিরিয়ে নিলেন। (বুখারি : হাদিস ২৪৪৭)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ অতএব এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী রেখো না। কারণ, আমি জুলুমের সাক্ষী হতে পারি না।’ (মুসলিম : হাদিস ৪২৬৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, জনৈক আনসারী সাহাবিকে রাসুল (সা.) ডাকলেন। ইতোমধ্যে ওই সাহাবির এক পুত্রসন্তান তার কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাসন্তানও সেখানে উপস্থিত হলো। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে রাসুল (সা.) বললেন, উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : হাদিস ১৬৫০১)

সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া প্রিয়নবী (স.) কখনোই পছন্দ করেননি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাওয়াই উত্তম।’ (বুখারি: ১/৪৩৫; মুসলিম: ৩/১২৫১)

মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে সবাই কমবেশি অসিয়ত করে। এ অসিয়তে যদি কোনো উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চিন্তা থাকে, তাহলে এমন অসিয়ত ইসলামে নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘...এটা (উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন) অসিয়ত আদায় ও ঋণ পরিশোধের পর (কার্যকর হবে), যদি অসিয়ত কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও অশেষ সহনশীল।’ (সুরা নিসা: ১২)

এ বিষয়ে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘কোনো কোনো ব্যক্তি ৭০ বছর যাবত (গোটা জীবন) নেক আমল করে। কিন্তু অসিয়ত করার সময় জুলুম করে। তখন একটি খারাপ কাজের মাধ্যমে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ফলে সে জাহান্নামে যায়। আর কোনো কোনো ব্যক্তি ৭০ বছর যাবত (গোটা জীবন) খারাপ কাজ করে। কিন্তু অসিয়ত করার সময় সে ইনসাফ করে। তখন একটি ভালো কাজের মাধ্যমে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ফলে সে জান্নাতে যায়।’ (আবু দাউদ: ২৮৬৭; তিরমিজি: ২১১৭)

এনটি