প্রতীকী ছবি

বিভিন্ন ঘটনা বা পরিস্থিতিতে মানুষকে তর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। তর্কের এই বিষয়টি নিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মানুষ সবচেয়ে বেশি বিতর্ককারী।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ৫৪)

অহেতুক ও অযথা তর্কে লিপ্ত হওয়ার পুরোপুরি নিন্দনীয় কাজ। আমাদের সামাজিকতা ও ধর্ম দৃষ্টিকোণ থেকে কখনো অহেতুক তর্কে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়। তবে তর্ক কেবলই অযথা কিংবা অর্থবিহীন—বিষয়টা এমন নয়। তর্কের নিন্দনীয় ও প্রশংসনীয় উভয় দিকই রয়েছে।

বিতর্কে কখনো সত্যকথন, প্রমাণ উপস্থাপন ও যথার্থ মতামত প্রকাশ করা প্রশংসনীয়। আর বিতর্কে যখন তিক্ততা ও ঝগড়া-বিবাদ হয় এবং সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়, তখন তা নিন্দনীয়।

আল্লাহ তাআলা প্রশংসনীয় বিতর্কের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের পথে হেকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো। ’ (সুরা নাহাল, আয়াত : ১২৫)

সুতরাং আমাদের বিতর্ক যেনো হয় উত্তম পদ্ধতিতে। নম্র, ভদ্র ও সুন্দর বাক্য বিনিময়ে। বিতর্ক যেনো খারাপ ভাষায় না হয়। সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সঙ্গে বিতর্ক করো না। ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৬)

হীন ও কুতর্কে লিপ্ত হওয়া নিন্দনীয় ও দোষনীয়। এতে সত্য উন্মোচিত হওয়ার পরিবর্তে মনে জেদ ও রাগ বাড়ে। জেদের বশবর্তী হয়ে প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। পরিণামে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ-হিংসা ও কলহের সৃষ্টি হয়।

দ্বন্দ্ব-কলহ আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘তারা কেবল বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে, বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। ’ (সুরা যুখরুফ, আয়াত : ৫৮)

কুতর্কে লিপ্ত হওয়ার নানান উপকরণের মাঝে আমাদের বসবাস। যার কয়েকটি এমন :  ১. প্রকাশ্যে, অসময়ে এবং অনুপযোগী স্থানে উপদেশ ‘বিলি’ করা। মোটকথা অযথা পণ্ডিতি দেখানো ২. অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা। চাই সেটা নৈতিক হোক বা অনৈতিক। ৩. অবসর থাকা। কাজকর্ম না থাকলেও মানুষ কুতর্কে লিপ্ত হয়।

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সেসব বিষয়েই বারণ করেছেন, যাতে বান্দার নগদে বা ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতি রয়েছে। তিনি মানুষকে কুতর্ক করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এটা অনেক অনিষ্টের জন্মদাতা।

কুতর্কের ভয়াবহ কিছু ক্ষতিকর দিক-

এক. কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া। প্রায় আমরা সকলেই জানি যে, আল্লাহ তায়ালা শবে কদরের মতো মহান রাতের সুনির্দিষ্ট সময়ের বিষয়টি কেবল ঝগড়া-কুতর্কের কারণে তুলে নেন।

দুই. অন্তর কঠিন করে ও শত্রুতার জন্ম দেয়। কুতর্ক প্রাচীন বন্ধুত্ব ও সুদৃঢ় বন্ধনকে খুলে দেয়। নিদেনপক্ষে চড়াও হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে।

তিন. সম্মানহানি। যারা মানুষের সঙ্গে বিবাদ-কুতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের সম্মান নষ্ট হয়। যে বেশি তর্ক করে, সে অবশ্যই তা বুঝতে পারে। অযথা তর্কের জন্য সবচেয়ে বড়ো সতর্কবার্তা হলো রাসুল (সা.) এর বাণী। তিনি বলেন, ‘বাক-বিতণ্ডাকারী ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট অত্যধিক অপছন্দনীয়। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৬৭৩)