মহাকাশ-সমুদ্রতল বা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সবসময়-সব জায়গায়, সব পরিস্থিতিতে একজন মুসলিমের ওপর নামাজ ফরজ। তবে কেউ শুধু অজ্ঞান অবস্থায় ৬ ওয়াক্ত বা তার বেশি নামাজের সময় পার করলেই সেই নামাজের কাজা করতে হয় না। এছাড়া সব-সময় যেকোনও পরিস্থিতিতে নামাজ আদায় করা ফরজ। বিশেষ কিছু মুহুর্তে মানুষের নামাজ আদায় নিয়ে প্রশ্ন জাগে অনেকের মনে। এমন একটি মুর্হুত হলো- মহাকাশে অবস্থানকালে নভোচারীদের নামাজ ও অজুর পদ্ধতি। 

অবশেষে মানুষের এমন কৌতুহলের অবসান ঘটিয়েছেন সৌদি আরবের নভোচারী আলি আল-কারনি। গত ৬০ বছরের বেশি সময়ে পাঁচ শতাধিক লোক মহাকাশে গেছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন মুসলিম নভোচারী রয়েছেন। তবে এবারই সাধারণ মুসলিমদের দীর্ঘ দিনের আগ্রহ ও প্রশ্নের জবাব মিলেছে আলি আল-কারনির টুইটার পোস্টের মাধ্যমে।

গত রবিবার (২৮ মে) টুইটারে শেয়ার করা এক ভিডিওতে আল-কারনি বলেছেন, ‘মূলত মহাকাশে নভোচারীরা সব সময় ভাসমান থাকেন। তাই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পা স্থির করে কিবলা নির্ধারণ করা হয়।’ এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) একটি লোহার টুকরো দেখিয়ে বলেন, ‘এর নিচে পা স্থির রেখে নামাজ পড়া হয়।’ 

অজু প্রসঙ্গে আল-কারনি জানান, মহাকাশ স্টেশনে বিশেষ ব্যাগে পানি রাখা হয়।

সেখান থেকে তা বুদবুদের মতো হয়ে বের হয়। অতঃপর বুদবুদগুলো একটি তোয়ালেতে একত্র করলে তাতে সিক্ততা তৈরি হয়। সেই ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীরের অঙ্গ মোছা হয়। মূলত মাসেহ পদ্ধতিতে অজুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।


গত ২১ মে সৌদি আরবের প্রথম নারী নভোচারী রায়ানা বারনাভি এবং আলি আল-কারনি মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুধবার (৩১ মে) ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে ফিরে আসেন। মহাকাশে অবস্থানকালে সেখান থেকে পবিত্র মক্কা ও মদিনার উজ্জ্বল দৃশ্য ধারণ করেন টুইটারে ভিডিও শেয়ার করেন নভোচারী রায়ানা বারনাভি। তা ছাড়া সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের দৃশ্য ধারণ করেন আলি আল-কারনি।

গত চার দশকে অনেক মুসলিম নভোচারী মহাকাশে গেছেন। তারা সেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি নামাজ, রোজা ও কোরআন পড়েছেন। ১৯৮৫ সালে প্রথম আরব ও মুসলিম নভোচারী হিসেবে সৌদি যুবরাজ সুলতান বিন সালমান মহাকাশে যান। মহাকাশে অবস্থানকালে বিভিন্ন ইসলামী দায়িত্ব পালনের কথা তিনি তার ‘সেভেন ডেইজ ইন স্পেস’ বইয়ে বর্ণনা করেছেন।

২০০৬ সালে ইরানি বংশোদ্ভূত আনুশেহ আনসারি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে মহাকাশে যান। ২০০৭ সালে মহাকাশে রমজানের কয়েক দিন ও ঈদ উদযাপন করেন মালয়েশিয়ার নভোচারী শেখ মুসজাফর শাকর। ২০১৯ সালে আমিরাতের প্রথম নভোচারী হাজ্জা আল মানসুরি মহাকাশে যান। 

সূত্র : আলজাজিরা মুবাশির

এনটি