হিজরি নববর্ষে কর্মপরিকল্পনা যেমন হবে
ছবি : গেটি ইমেজ
হিজরি বর্ষের সঙ্গে মুসলমানদের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির জড়িত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হিজরি সনের শুভ সূচনা হয়।
হজরত ঈসা (আ.)-এর আসমানে গমনের পর থেকে খ্রিস্টাব্দ সাল গণনা করা হয়ে থাকে। আর শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিন অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরি সাল গণনা করা হয়। হিজরি সালের ক্যালেন্ডার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় থেকে প্রচলিত ছিল না। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের সাত বছর পর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৭ হিজরি থেকে হিজরি সালের প্রচলন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
হিজরি নববর্ষের সূচনা
হজরত ওমর (রা.) অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলেন। শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি, শাসনাধীন রাজ্যে চিঠিপত্র প্রেরণসহ নানাক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে তিনি সমসাময়িক সাহাবাদের পরামর্শক্রমে হিজরি সাল প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
বিজ্ঞাপন
হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররম অনেক ফজিলত ও মর্যাদার। চার সম্মানিত মাসের প্রথম মাস মুহাররম। আবহমান কাল থেকেই মহররম মাস এক বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
শরিয়তের দৃষ্টিতে যেমন এ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি এই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও অনেক দীর্ঘ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করো না।’ -(সূরা আত-তাওবা, আয়াত, ৩৬)।
মুহাররম মাসের আমল ও আমলের গুরুত্ব
মুহাররম মাসে রোজা রাখার প্রতি ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম ও জামে তিরমিজি)।
মুহাররম মাসের ১০ তারিখ তথা আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি)।
হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার কাছে ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহাররম মাসে রাখো। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি)।
অন্য হাদিসে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তায়ালা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহিহ মুসলিম ও জামে তিরমিজি)।
আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে আছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ)।
হিজরি নববর্ষের প্রথম প্রহরে কর্মপরিকল্পনা
মনে রাখতে হবে, হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররম। এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। মুহাররম মাস শুধুমাত্র কারবালার ঘটনা স্মরণ করার মাস নয়। এ মাসের মর্যাদা কারবালাকে কেন্দ্র করে নয়, বরং এ মাস গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মাস, ত্যাগের মাস, ভালো কাজ করার মাস, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে গড়ার তোলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাস।
নতুন বছর মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনার পথে হাঁটা। হিজরি নববর্ষ হয়ে উঠুক মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ ও মুক্তির বছর। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হিজরি বর্ষের মর্যাদা ও কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমলি জিন্দেগি যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক