প্রতীকী ছবি

মহামারি করোনায় অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হয়ে সুস্থও হয়েছেন। পরিস্থিতিও খারাপের দিকে যাচ্ছে দিন দিন। কিন্তু কথা হলো— কেউ আক্রান্ত হলে তখন তিনি কীভাবে নামাজ পড়বেন? অনেকে এমনটা জানতে চান। আবার অনেক জানতে চান যে, সংক্রমণের আশঙ্কা হলে জুমার নামাজ ও জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিধান কী?

সংক্রমণ ও মহামারির মতো বিপদ-আপদ রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকেই ঘটে আসছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে— সে ব্যাপারে ইসলামি আইনবিদদের গবেষণা রয়েছে। পূর্বসূরি ইসলামি আইনবিদদের যেমন ফতোয়া রয়েছে, তেমনি বর্তমান বিশ্বের ইসলামি আইনবিদদেরও ফতোয়া রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে গত বছরের ১৮-০৩-২০২০ তারিখ বুধবার (১৬-৭-১৪৪১ হিজরি) সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত উচ্চ উলামা পরিষদের চব্বিশতম সভায় পর্যালোচনা হয়। তাতে ‘মহামারি ছড়িয়ে পড়া কিংবা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকা অবস্থায় জুমার নামাজ ও জামাতের সঙ্গে নামাজে উপস্থিত না হওয়ার রুখসত’ (অবকাশ) বিষয়ে চমৎকার আলোচনা করেন। শরিয়তের দলিল-প্রমাণ, উদ্দেশ্য লক্ষ্য, নীতিমালা ও এ-সংক্রান্ত আলেমদের বক্তব্য সর্বোতভাবে অবগতির পর উচ্চ উলামা পরিষদ নিম্নোক্ত ঘোষণা দেয়—

এক. জামাতে উপস্থিত হবে না
মহামারী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে উপস্থিত হওয়া হারাম। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, অসুস্থকে যেন সুস্থ পশুর মধ্যে প্রবেশ করানো না হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩২৮; মুসলিম, হাদিস : ৪১১৭)

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কোনো এলাকা প্লেগ রোগের সংবাদ শুনলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় তোমরা অবস্থান করার মধ্যে সেখানে প্লেগ রোগ শুরু হয়, তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দুই. কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওয়াজিব
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা অভিজ্ঞরা যাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে— তার ওপর ওয়াজিব হলো- এ সিদ্ধান্ত মেনে চলা। নামাজের জামাতে ও জুমার নামাজে উপস্থিত না হওয়া। নামাজগুলো নিজের বাসায় কিংবা তার কোয়ারেন্টাইনের স্থলে আদায় করা।

আল-শারিদ বিন সুওয়াইদ আছ-ছাকাফি (রা.) ও সাহাবি জাবের (রা.) বলেন, সাকিফের প্রতিনিধিদলের মধ্যে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে বায়আত হতে এসেছিলেন। রাসুল (সা.) তখন লোকমারফত তাকে বলে পাঠান, ‘তুমি ফিরে যাও। আমি তোমার বায়আত গ্রহণ করে নিয়ে নিয়েছি।’ (আস-সুনানুস সগির, খণ্ড : ৩, হাদিস : ২৫১৫)

তিন. জামাতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে অবকাশ
যে ব্যক্তি এই আশঙ্কা করছে যে, সে নিজে আক্রান্ত হবে কিংবা অন্যকে আক্রান্ত করবে- তার জন্য জুমার নামাজ ও নামাজের জামাতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে অবকাশ রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নয় এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা নয়।’ (ইবনে মাজাহ)

উল্লিখিত অবস্থাগুলোতে যে ব্যক্তি জুমার নামাজে উপস্থিত হবে না, সে জুমার বদলে চার রাকাত জোহরের নামাজ আদায় করে নেবে। তবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করা, তার কাছে আশ্রয় ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ যদি তোমাকে বিপদে ফেলেন; তবে তিনি ছাড়া তা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারও নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণের ইচ্ছা করেনতবে তার অনুগ্রহ প্রতিহত করার ক্ষমতা কারও নেই। তার বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে কল্যাণ দান করেন। আর তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১০৭)