রমজানের রোজা সবার ওপর ফরজ। রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে মোটামুটি সবাই অবগত। কম-বেশি সবার জানাশোনা আছে। সমাজের প্রাপ্ত বয়স্ক সব মুসলমানই এ মাসে রোজা রাখেন। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যাদের রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম।

এখানে আমরা এমন লোকদের ব্যাপারে আলোচনা করব— যারা এ মাসে রোজা না রাখলেও চলে। তবে কোন অবস্থায় ও কোন পর্যায়ে না রাখার সুযোগ রয়েছে, তা বিস্তারিত জানতে হলে ওই প্রাসঙ্গিক মাসআলাগুলো জেনে নিতে হবে।

মুসাফির

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

অসুস্থ ব্যক্তি

রোজা রাখার কারণে কোনো জটিল রোগ সৃষ্টি বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধির প্রবল ধারণা হলে, তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুস্থ হওয়ার পর কাজা করে নেবেন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয়— তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৩/৩৫৯; আদ দুররুল মুখতার : ২/৪২২)

দুর্বল ব্যক্তি

বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত সাবেত বুনানি (রহ.) বলেন, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) যখন বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোজা না রেখে (ফিদইয়া) খাবার দান করতেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৫৭০)

গর্ভবতী ও আন্তসত্ত্বা

রোজা রাখার কারণে গর্ভবতী নারীর নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানি বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হলে তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। পরে এ রোজা কাজা করে নেবে। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৩/৩৫৯)

দুগ্ধদানকারী মা

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করেছেন এবং নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোজার হুকুম শিথিল করেছেন। (জামে তিরমিজি : ১/১৫২, হাদিস : ৭১৫)

ঋতুবর্তী নারী

মাসিক ঋতুস্রাব তথা পিরিয়ডের (হায়েজ) সময় এবং সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০ দিন (নেফাস) নারীদের জন্য ওয়াজিব হলো রোজা বর্জন করা। এ অবস্থায় নামাজ ও রোজা কোনোটাই আদায় করা জায়েজ হবে না। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)

রোজা কাজা করা আর নামাজ কাজা না করা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) যা বলেছেন সমস্ত উলামায়ে কেরাম তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এসব ব্যক্তি রোজার অবশিষ্ট সময় যেভাবে কাটাবে

এক. অসুস্থতা, বার্ধক্য ইত্যাদি শরীয়তসম্মত কোনো সমস্যার কারণে কেউ রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম না হলে— সে পানাহার করতে পারবে। তবে রোজাদারদের অগোচরে পানাহার করা উচিত।

দুই. মুসাফির যদি দিনের বেলা সফর থেকে বাড়ি ফিরে আসে তাহলে অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা : ৬/২২১)

তিন. তদ্রুপ দিনের বেলা কোনো মহিলার পিরিয়ড বন্ধ হলে অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা : ৬/২২০; মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক : ৪/১৭০)