ছবি : শাটারস্টক

মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নবীজির চাচা আবু তালেব ও সহধর্মীনী খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর মক্কার কাফেরদের অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে যায়। তখন হিজরতের ছয়মাস আগে মেরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার হাবীবের প্রতি এই ঘটনা ছিল বিশেষ উপহার বা শান্ত্বনা।

মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়...

এক রাতেই সংঘটিত হয় মেরাজের ঘটনা। এই রাতে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুরাক নামক এক প্রাণীতে চড়িয়ে প্রথমে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান। সেখানে বুরাকটি বেঁধে রাখেন তিনি। এরপর মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখূলুল মসজিদ নামাজ আদায় করেন।

বুরাক দেখতে কেমন ছিল?

বুরাক নামক এই প্রাণীটি দেখতে কেমন ছিল এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে মুসনাদে আহমাদের সূত্রে বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার কাছে বুরাক আনা হলো, এই প্রাণীটি গাধার থেকে উঁচু ও খচ্চরের থেকে একটু ছোট ছিল। তার গতি এমন ছিল যে, তার দৃষ্টি সীমা যতদূর যায় সে সেখানে তার এক এক কদম রাখছিল।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, বুরাকের দুই কান ওপরের দিকে উঠানো ছিল এবং কানদুটো দুলছিল। আমার আগের নবীরাও এর ওপর সওয়ার হয়েছিলেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুরাকের ওপর সওয়ার হওয়ার সময় সে ছটফট করছিল। তখন হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাকে বলেন, তুমি এমন করছো  কেন? আল্লাহর কসম! এর আগে এমন সম্মানিত কোনো ব্যক্তি কখনো তোমার ওপর সওয়ার হননি। একথা শোনার পর বুরাক একেবারে শান্ত হয়ে যায়।

মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় আরও রয়েছে, আরোহীর আরামের জন্য বুরাকের ওপর লাগাম এবং জিন বা গদীও ছিল। 

বুরাক সম্পর্কে হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, বুরাক হলো, দীর্ঘ অবয়ব বিশিষ্ট সাদা রঙের একটি প্রাণী, যতদূর তার দৃষ্টি যায়, সে তার এক একটি পা সেখানে রাখতে পারে।

বুরাক সর্ম্পকে হজরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, বুরাক যখন ওপরের দিকে উঠত, তখন তার হাত-পা সমান হয়ে যেত। একইভাবে যখন নিচের দিকে নামতোতখনও হাত-পা সমান থাকত, যেন আরোহীর কোনো কষ্ট না হয়।

নবীজি সা.-এর আকাশে ভ্রমণ

মসজিদুল আকসা থেকে বের হয়ে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এক বিশেষ ধরনের সিঁড়িতে চড়িয়ে নবীজিকে নিয়ে আকাশ ভ্রমণে যান। এই ভ্রমণে প্রত্যেক আকাশে একজন করে নবীর সঙ্গে দেখা হয় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সবার সঙ্গে নবীজির পরিচয় করিয়ে দেন। এই ভ্রমণে আল্লাহ কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে আসেন তিনি।

(তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৩ খণ্ড, ২৬৫, ২৬৭,২৭৭, মুসনাদে আহমাদ, তাফরিরে মাআরিফুল কোরআন, ৫ম-খণ্ড, ৪৩১, তাফসিরে মাযহারী  ৭ম-খন্ড, ৬৬৯)