ছবি : সংগৃহীত

রমজানের রোজা রাখা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো বড়সড় অপারগতার কারণে রোজা রাখতে না পারলে ইসলামে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা না রাখা মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহের কাজ।

রমজানের একটি রোজা ছুটে গেলে অনেক কল্যাণ ও সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার নামান্তর। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শরিয়তসম্মত কারণ বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভাঙে, তার ওই রোজার বিপরীতে সারা জীবনের রোজাও রমজানের একটি রোজার সমমর্যাদা ও স্থলাভিষিক্ত হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)

তবে অসুস্থতা বা অন্য ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে অন্যদিন পালনের সুযোগ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে (রমজানে) উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির হয়, সে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রোজার কাজা আদায়ের বিধান
কোনো সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা না রাখলে বা অনিচ্ছায় ভেঙে ফেললে অথবা কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে পরে ওই রোজার কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হবে।

মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে কষ্ট হলে, অনুরূপ গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী নারী যদি নিজের বা বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা করে, তাহলে রমজানে রোজা না রেখে পরে তা কাজা করে নিতে পারবে, এ ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫; তিরমিজি, হাদিস: ৭১৫)

রমজানের কাজা রোজার ব্যাপারে সব ইমাম একমত যে, কোনো ব্যক্তি যে কয়দিনের রোজা রাখতে পারেনি সে কয়দিনের রোজা কাজা করবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন— 

এ দিনগুলোর ক্ষেত্রে লাগাতরভাবে রোজা রাখা ফরজ নয়। ইচ্ছা করলে লাগাতরভাবে রোজা রাখা যাবে। আবার ইচ্ছে করলে আলাদা আলাদাভাবেও রোজা রাখা যাবে। আপনার সাধ্যানুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একদিন অথবা প্রতি মাসে একদিন রোজা রাখতে পারেন। এর দলিল হচ্ছে- পূর্বোক্ত আয়াত। এ আয়াতের মধ্যে কাজা পালনের ক্ষেত্রে লাগাতরভাবে রোজা রাখার কোনো শর্ত করা হয়নি। বরং শুধু যে কয়দিন রোজা ভঙ্গ করা হয়েছে সে সম সংখ্যক দিন রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। (আল-মাজমু: ৬/১৬৭; আল-মুগনি ৪/৪০৮)

নারীর ঋতুস্রাব পরবর্তী কাজা আদায়
মাসিক ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব পরবর্তী স্রাবের সময় রোজা রাখা জায়েজ নেই। তবে পরবর্তী সময়ে ওই দিনগুলোর রোজার কাজা দিতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।

হাদিসে এসেছে, এক নারী আয়েশা (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, ঋতুমতী নারী যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়, তখন কি সে নামাজ কাজা করবে? তিনি বললেন, তুমি কি হারুরি গোত্রের নারী? আমরা তো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ঋতুমতী হতাম এবং যখন পবিত্র হতাম, তখন আমাদের রোজা কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হতো; কিন্তু সালাত কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হতো না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩১৮)

রোজা রাখার পর দিনের বেলায় যদি কোনো নারীর মাসিক শুরু হয়, ওই নারীর জন্য খাওয়াদাওয়ার অনুমতি আছে। তবে লোকজনের সামনে না খেয়ে নির্জনে খাওয়াদাওয়া করবে। আর যে নারী মাসিকের কারণে রোজা রাখেনি, দিনের যে সময়ে তার রক্ত বন্ধ হবে, তখন থেকেই খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে রোজাদারের মতো দিনের অবশিষ্ট অংশ অতিবাহিত করবে এবং পরে ওই দিনের রোজা কাজা করে নেবে। (আল-লুবাব: ১/১৭৩)

নারীদের জন্য কৃত্রিম উপায়ে সাময়িক ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা অনুচিত। এতে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তা সত্ত্বেও এ পদ্ধতিতে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা অবস্থায় রোজা-নামাজ করলে, তা আদায় হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৩/২৭৮)

কাজা আদায়ের সময়
পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যতটা দ্রুত রমজানের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। বিনা কারণে কাজা আদায়ে বিলম্ব করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। কারো ওপর যদি রমজানের রোজা কাজা থাকে, তবে সে তা আদায় করবে। অতঃপর শাওয়ালের ছয় রোজার মতো অন্যান্য নফল রোজা আদায় করবে।

কাজা আদায় না করে অন্য কোনো নফল আদায় করলেও তা শুদ্ধ হয়ে যাবে— যদিও তা অনুচিত হবে। বছরের যেকোনো দিন রমজানের রোজার কাজা আদায় করা যায়, তবে ঈদের দিনের মতো নিষিদ্ধ দিন, পরবর্তী কোনো রমজান ও মান্নাতের রোজার জন্য নির্ধারিত দিনে তা আদায় করা যাবে না। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৩/১০৭-১১৩)