প্রতীকী ছবি

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি রোজা। মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতগুলোরও অন্যতম। রোজার সময় সতর্ক থাকতে হয়, যেন এমন কিছু প্রকাশ না পায়— যার কারণে রোজা ভেঙে যায়। আবার এমন কিছু কারণ রয়েছে, যেগুলোর কারণে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় কিংবা রোজা মাকরুহ হয়, সেগুলো আমরা ভিন্ন লেখায় আলোচনা করেছি। আবার যেসব কারণে রোজা ভাঙে না, সেগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।

সেই ধারাবাহিকতায় রোজাদার ও ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জানার সুবিধার্থে এমন বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হলো— যেগুলোর কারণে রোজা মাকরুহ হয় না। প্রসঙ্গত, যেসব কারণে রোজা ভাঙে না ও যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় না— এই দুই ধরনের কারণগুলো প্রায় একই রকম। নিম্নে রোজা মাকরুহ না হওয়ার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হলো :

♦ অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মশা, মাছি চলে গেলে। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৬) ♦ তেল, সুরমা, শিঙা লাগালে হলকে তার স্বাদ পেলে। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৬) ♦ স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না। (তিরমিজি, হাদিস ৭১৯)

♦ যেকোনো সময় মেসওয়াক করলে রোজা মাকরুহ না। সেটি কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক। (আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯)

♦ কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর ফলে কোনো ময়লা বের হলে তারপর ময়লাযুক্ত কাঠি বারবার কানে প্রবেশ করালে। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)

♦ রোজা অবস্থায় সাধারণ ইনজেকশন বা টিকা লাগানো বৈধ। তবে এমন ইনজেকশন বা টিকা লাগানো মাকরুহ, যেগুলো দ্বারা রোজার কষ্ট বা দুর্বলতা দূর হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৯)

♦ সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি দংশন করলে রোজা মাকরুহ হয় না। (আল-ফিকহুল হানাফি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১৪; মাহমুদিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৯)

♦ ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হবে না। আর দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে মাকরুহও হবে না। ♦ পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি থুতুতে লাল আভা থেকে যায়, তাহলে রোজা মাকরুহ হবে না। (এমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩১)

♦ ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া অথবা ঠাণ্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া অথবা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৪; দারুল উলুম, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪০৫)

♦ স্বপ্নে কিংবা সহবাসে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে এবং সুবেহ সাদিকের আগে গোসল না করে রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার রোজার মধ্যে অসুবিধা হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮০)

♦ গরমের দরুন দীর্ঘক্ষণ পানিতে অবস্থান করা মাকরুহ নয়। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৯) ♦ গলা খাঁকারি দিয়ে গলদেশ থেকে মুখে কাশি বের করা, তারপর আবার গিলে ফেলা মাকরুহ নয় (এরূপ না করাই উচিত)। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৭৩)

♦ রোজা অবস্থায় মাথা বা চোখে ওষুধ দেওয়া মাকরুহ নয়। (এমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৭) ♦ রোজা অবস্থায় নাকের মধ্যে ওষুধ ব্যবহার করার দ্বারা ব্রেনে না পৌঁছলে রোজা মাকরুহ হয় না। (মাহমুদিয়া, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৬৯)

♦ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরুহ নয়। (মাহমুদিয়া, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৮০) ♦ রোজা অবস্থায় পাইপ দ্বারা মুখে হাওয়া নিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (মাহমুদিয়া, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৮০)

♦ শরীরে কোনো ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত প্রবাহিত হলে বা রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হয় না। তবে রোজাদার থেকে বের করা মাকরুহ। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮)

♦ ডাক্তার যদি চিকিৎসার শুকনো কোনো যন্ত্র পেটে প্রবেশ করায়, অতঃপর তা বের করে ফেলে, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আল-ফিকহুল হানাফি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৭১২)

♦ পানিতে ডুব দেওয়ার পর কানের ভেতর পানি চলে গেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (বিনায়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৪; আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৪; শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)

একজন মুসলমানের রমজান পালনের পূর্ণাঙ্গ একটি গাইডলাইন ‘যেভাবে কাটাবেন রমজান’। রমজানবিষয়ক প্রস্তুতির জন্য এবং সর্বোত্তমভাবে রমজান পালনে এই বইটি পাঠকের জন্য বেশ উপকারী। বইটি রচনা করেছেন আলেম ও সাংবাদিক মুফতি কাসেম শরীফ