প্রতীকী ছবি

অবসরে সংগীত শোনার প্রচলন রয়েছে অনেকের মাঝেই। রক্ষণশীল এবং ধর্মীয় ঘরনার মানুষজন মিউজিক ছাড়া গজন, নাশিদ বা ইসলামি সংগীত শুনে থাকেন। ইসলামি শরীয়ত ও বিধান মোতাবেক যেহেতু বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিক ব্যবহারের অনুমোদন নেই তাই ধর্মপরায়ণ মুসলিমরা সচেতনভাবেই তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।

বর্তমানে অনেক ইসলামি সংগীতে বাদ্য বা মিউজিক ব্যবহার করা হয়। জনপ্রিয় ইসলামি সংগীত শিল্পীদের অনেকের গজল বা নাশীদে মিউজিক ব্যবহারের প্রবণতাও রয়েছে। তবে ইসলামি সংগীতের বড় অংশের শ্রোতাই  যেহেতু ধর্মীয় ঘরনার মানুষজন, তাই ইসলামি সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা দেখা যায় প্রায় সময়।

ইসলামি সংগীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আলেমদের মতামত সবসময় স্পষ্ট। তারা কখনো এ বিষয়ে উৎসাহ দেননি, বরং সবসময় বিরত থাকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। আলেমদের মতে, বাদ্য-বাজনা বা মিউজিক শোনা না-জায়েজ। তাই হামদ-নাতের সঙ্গে বাদ্য-বাজনা থাকলে এমন হামদ-নাত শোনা জায়েজ হবে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম। (জামে তিরমিজি, হাদিস, ১২৮২; ইবনে মাজাহ, হাদিস, ২১৬৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক হাদিসে বলেছেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৬৭৫৮)

গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সবাই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম মালেক রহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।- (কুরতুবী ১৪/৫৫) ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক। তিনি আরও বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।-(ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫)

হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।- (আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮)

তাই বাদ্য এবং মিউজিক আছে এমন সংগীত চাই তা ইসলামি হোক বা অনৈসলামি সংগীত- এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তবে হামদ-নাত, গজল যদি সম্পূর্ণ বাজনা ও মিউজিক মুক্ত হয় এবং তার কথায় যদি শিক্ষণীয় কিছু থাকে এবং শরিয়তের কোনো আকিদা বা নির্দেশের পরিপন্থী না হয় তাহলে তা বলা ও শোনা জায়েজ।

আলেমদের মতে, যারা হামদ-নাত বা ইসলামি ধাঁচের গজল পরিবেশন করবে তাদের দায়িত্ব হল এতে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা এবং গানের সুরে তা না বলা। একই সঙ্গে এসব ক্ষেত্রে অন্যদের পরিভাষা- যেমন, কনসার্ট, গান ইত্যাদি শব্দও পরিহার করা উচিত।

সূত্র : সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৯০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৬৯০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৫; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৮১; আলবাহরুর রায়েক ৭/৮৮; ইসলাম আওর মূসিকী, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ., ফাতওয়া বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা।

এনটি